
গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সারাদেশের মতো ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়ও সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হয়েছে। গত ৮ দিন শহরের বিদ্যালয়গুলোতে উপস্থিতির হার ৫০% থেকে ৬০%, ধীরে ধীরে তা বাড়ছে। তবে শিক্ষার্থীর উপস্থিতির হার শতভাগ না হলেও প্রাণ ফিরেছে স্কুল-কলেজগুলোয়।
এদিকে স্বাস্থ্যবিধি মানা ও সামাজিক দূরত্ব অটুট রাখার জন্যে নেওয়া হয়েছে কঠোর পদক্ষেপ। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মধ্যেও যথেষ্ট সচেনতা দেখা যায়। অভিভাবকগণও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সরকার প্রণীত স্বাস্থ্যবিধি শতভাগ মানছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পৌর এলাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন চমৎকার চিত্র দেখা যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল ১০ টার দিকে সূর্যমুখী কিন্ডার গাটেনের সামনে ৩ জন অভিভাবক মুখে মাস্ক পরে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পরস্পর কথা বলছেন। তাদের মধ্যে আসমা বেগম জানান, তিনি সরকার প্রণীত স্বাস্থ্যবিধি ১০০% মেনে চলেন এবং সন্তানদেরকেও তা মানতে উৎসাহিত করেন। তার ছেলের নাম আফজাল হোসেন। সে এই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। করোনার কারণে তার জন্যে দুই সেট স্কুল ড্রেস তৈরি করেছেন। আজ যে ড্রেস পরে স্কুলে এসেছে, কাল সেটা পরে আসবে না। প্রতিদিনের ড্রেস প্রতিদিন ধোয়া হয়।
দেখা যায়, প্রধান শিক্ষিকা সালমা বারী প্রতিটি কক্ষে প্রবেশ করে দেখছেন, শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা ঠিকঠাক মতো স্বাস্থ্যবিধি মানছেন কি না। স্কুলের প্রধান গেইটে কাজ করছেন হাবিব মিয়া ও সোহেল রানা নামে দুইজন দপ্তরি। তাদের প্রত্যেকের মুখে মাস্ক লাগানো। তারা কোনো অভিভাবককে স্কুলের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না। তাদের দুইজনের কাছ থেকেই জানা যায়, এখানকার শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক সবাই শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুলে আসা-যাওয়া করেন।
প্রায় একই চিত্র সূর্যমুখী কিন্ডার গাটেনের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত আদর্শ কেজি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও। এ স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ কামাল উদ্দিন জানান, দীর্ঘদিন স্কুল খোলার পর বিদ্যার্থীদের পাশাপাশি আমরাও প্রাণ ফিরে পেয়েছি। এতদিন বাসায় একা একা অবস্থান করে হাঁপিয়ে উঠেছিলাম।
স্কুলের প্রতিটি কক্ষ ঘুরে দেখা যায়, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মুখে মাস্ক লাগানো। সবাই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মনযোগসহকারে শিক্ষকের বক্তব্য শুনছে আর শিক্ষকও মনের আনন্দে পাঠদান করছেন। স্কুল থেকে বের হওয়ার সময় দেখা যায়, তিনজন ক্ষুদে শিক্ষার্থী স্কুলের বেসিনে রক্ষিত সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে শ্রেণিকক্ষে ঢোকার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর অভিভাবকরা গেইটের বাইরে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে তাদের সন্তানদের জন্য অপেক্ষা করছেন।
এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ঠিক পূর্বপাশেই গভঃ মডেল গালর্স হাই স্কুল অবস্থিত। এই স্কুলের কাছে গিয়ে দেখা যায়, গেইটম্যান ফায়েজ মিয়া তাপমাত্রা পরিমাপ কারর যন্ত্র দিয়ে প্রবেশ করার সময় সকল ছাত্রীর তাপমাত্রা পরিমাপ করছেন। আর দপ্তরী আজিজুল হক ও মোঃ ফাহিম মিয়া ভিতরে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ফুটফরমায়েশে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা পারভিন আক্তার বলেন, গুটিকয়েকজন বাদে সব অভিভাবকই স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের সন্তানদেরকে স্কুলে আনা-নেওয়া করছেন।
মধ্যপাড়ার বাসিন্দা শংকর পালের দুই সন্তান এই স্কুলে পড়ে। একজন পঞ্চম শ্রেণিতে। আরেকজন এবার এসএসসি পরীক্ষা দিবে। তিনি তাদেরকে পৌঁছে দিতে স্কুলে এসেছেন। তিনি আরো বললেন, এই স্কুলের মূল ফটকে অভিভাবকদের কোনো ধরনের জটলা হয় না। যারা আসেন তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই স্কুল আঙ্গিনায় আসেন।
স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেন, এখানে সকল অভিভাবক ও শিক্ষার্থী স্বাস্থ্যবিধি মেনেই আসেন। স্কুলে এসে কোনো শিক্ষার্থীর শরীরে তাপমাত্রা বেশি বা অসুস্থ হয়েছে- এমনটি গত সাতদিনে পাওয়া যায়নি। অসুস্থ থাকলে অভিভাবকরাই ফোন দিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানাচ্ছে। স্কুল শুরুর আগে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে। পাশাপাশি অভিভাবকরাও তা মানছেন।
এই স্কুলের লাগোয়া উত্তর পাশে সরকারি মহিলা কলেজ অবস্থিত। এখনকার অফিস সহকারী এনামুল হকের কাছ থেকে জানা যায়, গড়ে প্রতিদিন কলেজে ৬০% শিক্ষার্থী উপস্থিত হচ্ছে। অবশ্য এই উপস্থিতির হার ক্রামান্বয়ে বাড়বে।
ময়মনসিংহ মিন্টু কলেজের সদ্য সাবেক শিক্ষক, বিশিষ্ট জীববিজ্ঞানী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পাইকপাড়ার বাসিন্দা আবুল হোসেনে জানান, তার মেয়ে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিবে। মেয়েকে নিয়ে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজে এসেছেন। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মতো বাংলাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা যদি এভাবে সরকার প্রণীত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে ও সামাজিক দূরত্ব রাখার অভ্যাস অব্যাহত রাখে, তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর কখনো বন্ধ করার প্রয়োজন হবে না।
প্রতিবেদক: খায়রুল আকরাম খান
ক্যাটাগরি: প্রধান খবর, শীর্ষ তিন
[sharethis-inline-buttons]