শনিবার রাত ১:১২, ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং

জীবনের খাঁজে খাঁজে গল্প, শুরু আছে শেষ নেই

৭৮১ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

তখন  টেনে পড়ি| বন্ধুরা মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম ডাব চুরি করবো| কাঁচাআম, বরই, পেয়ারা, ডালিম, আতা-ফল, কামরাঙা, জাম্বুরা, বেল, চালতা  চুরি আমাদের নিত্য-নৈমিত্তিক অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল| তবে আমার এই গল্প পড়ে কেউ ভাববেন না যে আমি প্রোফেশনাল চোর ছিলাম। আমরা চুরি করতাম শখে| ছোটবেলায় আমরা সবাই-ই দুস্টুমি করেছি| এইটা কেউ বলতে পারবে না যে আমরা কেউ-ই দুস্টুমি করি নাই| আমিও করেছি তবে হয়তো অন্যদের থেকে একটু বেশি|

বন্ধু জয়নাল বায়না ধরল বিএডিসি অফিসের পাশে জয়নালে’র চাচা’র বাড়িতে নারিকেল গাছ আছে সেই গাছ থেকে চুরি করতে হবে? অবশ্য চাচার বাড়িতে জয়নালের প্রবেশাধিকার রীতিমত নিষিদ্ধ ছিল| চাচার সুন্দরী কন্যা সুমনা যে কিনা আমাদের এক ক্লাশ নীচে পড়তো তার প্রতি জয়নালের দূর্বলতা সর্বজনবিদিত ছিল| দূর্বলতা একপক্ষের হলে অবশ্য সমস্যা ছিলনা, অপরপক্ষেরও যে তাতে সম্মতি আছে, সেটা আমরা জয়নালকে দেখলে সুমনার চোখের ইশারা ইত্যাদিতে বেশ টের পেতাম| চাচার কানেও তাদেরএই প্রেম ভালোবাসা র কথা পৌঁছেছে হয়তো, সে কারনেই এই নিষেধাজ্ঞা|

রাত বাড়ছে, হাজার বছরের সেই পুরাতন রাত| জয়নালের টাকায় রেল স্টেশনের সামনে রেস্টুরেন্ট থেকে সিঙ্গারা-চমুচা চা-বিস্কুট খেয়ে রেল লাইনের পাশ দিয়ে হেঁটে খাদ্য গুদামের ভেতর দিয়ে সামনে বিএডিসি অফিসের পাশে সুমনা’দের বাড়ি| জয়নাল চাচার উপর প্রতিশোধ নিতেই যে চাচা’র নারিকেল গাছ টার্গেট করেছে সেটা আমরা বুঝলেও  না বোঝার ভান করে ডাব চুরির অপারেশানে নেমে পড়লাম| সাতজনের একটা গ্রুপ রাত একটায় সুমনা’দের বাড়িতে হাজির হলাম| সমস্যা হল আমি ছাড়া অন্য কেউই গাছে উঠতে পারে না| জীবনের প্রথম বন্ধুর প্রেম ভালোবাসার জন্য চুরির উত্তেজনায়  তখন রীতিমত কাঁপছি| চুরি করার আগে কার কী দায়িত্ব হবে তা জয়নাল ঠিক করে দিল| জয়নালে’র দায়িত্ব পড়ল একটু দূরে দাঁড়িয়ে পাহারা দেওয়া| আর ডাবগাছটি’র গা ঘেঁষে সুমনা’দের টিনের গোয়ালঘর|

পরনের লুঙ্গিটা’কে কুমটি মেরে, তরতর করে গাছে উঠা শুরু করলাম! উঠার আগে পই পই করে সবাইকে বলে দিয়েছি সাড়াশব্দ পেলে আমাকে যেন আওয়াজ দেই| ডাব পাড়া শুরু হল| ডাব গাছের পাশেই একটা কচুরী পানা ভর্তি ছোট্ট ডোবা ছিলো| বেশ কায়দা কসরত করে দুই কাঁদি  ডাব নিচে ফেললাম  | আমি কচুরি পানার উপর ডাব ফালায়, দুপ করে শব্দ হয়| এটা এমন কোন শব্দ না যে ত্রিশ ফুট দূরে চাচার  ঘর থেকে কেউ টের পাবে| কিন্তু চাচা’য় পেল| তার কান আল্লাহ কি দিয়া বানাইছে সেটা একটা রহস্য| টের পাইয়া যথারীতি টর্চলাইট আর হাতের লাঠি নিয়ে বের হলেন| মুহুর্তে’ই আমাদেরকয়েকজন উধাও|

.আমিও এই যাত্রায় চাচার আগমন টের পেয়েছিলাম| কেটেও পড়তে পারতাম যদি লুঙ্গির বাধাটা যদি বেঈমানি না করতো| তাড়াতাড়ি নামতে গিয়ে লুঙ্গি খসে নীচে পড়ে গেল| ওইদিকে জয়নাল’য়ের চাচা তর্জন গর্জন করতে করতে ছুটে আসতেছে, আমি আর গাছ থেকে নামার ভরসা পাইলাম না|  আবার গাছের আগায় উঠে গেলাম| চাচা একা হলে অবশ্য সমস্যা ছিলনা, চাচার সাথে উনার কন্যাসুমনা’ও ছিল! টর্চ লাইটটাও ছিল মেয়েটার হাতে!! চাচা গাছের আগায় টর্চ মাইরা দেখে আমি গাছ জড়ায়া মিটমিট কইরা তার দিকে তাকায়া আছি| পরায় লুঙ্গি নাই, অবশ্য পরনে ডোরাকাটা 007মার্কা জাঙ্গিয়া ছিল| তিনি গর্জন করে উঠলেন, ওই  জলদি নাম! আইজকা তোরে খাইসি! চাচা’র মুখ”যে খারাপ হতে পারে সেটা উনাকে দেখে বুঝা যাইনা|

ডাব গাছের উপর থেইকা মিনমিন করে বলি, আফনে গাছের নীচ থেইকা সরেন নইলে কইলাম আফনের গায়ে মুইত্যা দিমু! গায়ে মুতে দেবার কথা শুনে  কিছুক্ষণ হতভম্ভ হয়ে তাকায়া ছিল| এর মধ্যে আমাদের বিচ্ছু বাহিনী শরীফ, রিপন, জয়নাল সহ তারা ছয়জন অন্ধকারে ফিরে আসে| প্রথমে জয়নাল অন্ধকার ঝোঁপ থেকে ডাব দিয়ে ঢিল দিলো| ঢিল সরাসরি লাগলো তার টিনের চালে| ছয়বন্ধু একযোগে ঢিল মারতে| সেই ঢিল পড়লো গিয়ে গাছের পাশেই  জয়না’লের চাচার গোয়ালঘরের টিনের চালে!! বিকট শব্দে রাতের নিস্তব্দতা ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেল| গরু গুলা ভয় পেয়ে  চিৎকার শুরু করলো| তারপর দিশা মিশা না পাইয়া গাছের তলায় খসে পড়া জয়নাল লুঙ্গী আর জুতাজোড়া নিয়ে ঘরে ঢুকে গেলেন| ডাবগুলো নিয়ে বিএডিসি অফিসের দেয়াল বেয়ে চলে এলাম মাঠে| ডাবগুলো প্রায় নারকেল হয়ে গিয়েছিল| শেষ পর্যন্ত আমাদের সেই অভিযান সফল হয়েছিল|

মেয়েদের স্কুলের পুকুরের কোনায় একটা ছবি তোলার স্টুডিও ছিল| স্টুডিওর পেছনের রুমে জয়নাল-সুমনার  ডেটিং করতো| আমরা বন্ধুরা চিপা জিন্স পইরা ভাব নিয়া স্টুডিও’র সামনে বইসা থাকতাম| পরিচিত কাউরে দেখলে জয়নাল’রে সতর্কবার্তা পাঠাতাম, বিনিময়ে আমাদের জন্যে মোড়ের দোকানের মিষ্টি-নিমকি ছিল ফ্রি| ব্যাপারটা কেমনে কেমনে জানি সুমনা’র বাপে টের পেয়ে যায়| তিনি একদিন ডেটিং’য়ের  সময়ে স্টুডিওতে হানা দিলেন| তার মাস দুয়েক পরেই মেয়েটা’র বিয়ে হয়ে যায়| বন্ধু জয়নালে’র প্রথম প্রেমের সেখানেই সমাপ্তি|  জয়নাল শোকে দু:খে মাথা ন্যাড়া করে ফেলে| ওই বয়সে দাঁড়ি গোফ গজায় নাই| গজাইলে হয়তো জয়নাল দাঁড়ি রেখে দেবদাস হওয়ার কথা ভাবতে পারতো|

জয়নালের আর পড়ালেখা হয় নাই| ওর বাপ ছিলেন  ব্যবসায়িক মানুষ| তিনি জয়নালের  উড়ু উড়ু ভাব দেখে স্কুল থেকে ছাড়াইয়া নিয়া নিজের মুদির দোকানে বসায়ে দিলেন| আমরা স্কুলে যাই,  জয়নাল মুদি দোকানের গদিতে বইসা উদাস মুখ কইরা তাকায় থাকে|

যাহোক আজ আমরা ছয়জন বন্ধু আর সেই জায়গায় নাই| বাবলু এবং জাসেদ দুরারোগ্য ব্যাধি মরে গেছে কিছু বছর আগে| শরীফ, আছে তার ঠিকাদারী ব্যবসা নিয়ে| রিপন ভালো আছে তার ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে অন্য এক শহরে| জয়নালের ব্যবসা খুব ভাল যাচ্ছে না তাই জয়নাল সপরিবারে শশুড়বাড়ি গাজীপুরে থাকে| ওদের সাথে দেখাও কম হয় অথবা দেখা হলেও তেমন কথা হয় না|

Some text

ক্যাটাগরি: মতামত

[sharethis-inline-buttons]

আমি প্রবাসী অ্যাপস দিয়ে ভ্যাকসিন…

লঞ্চে যৌন হয়রানি