রবিবার রাত ১:৩৬, ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং

আমার মৌলিক রচনাবলী: এস এম শাহনূর

৮৭৫ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাটি ও মানুষের কাছে আমার অনেক ঋণ

আজ ৮ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার। আমার জন্মবার। আমার জন্মদিন। অনেকের মাঝে বয়স লুকানোর প্রবণতা কাজ করে। কোনো এক সময় হয়তো আমার মাঝেও করত।বয়স বাড়ার সাথে সাথে টের পাচ্ছি। বাস্তবকে অনুভব করছি। বয়স কী আর বাড়ে? বয়েস তো শানবাঁধানো পুকুরঘাটের ইটপাথরের মত। প্রতিদিনই ক্ষয়ে যায়।এক একটা করে হারিয়ে যায়।আমার জন্ম(সম্ভবত) ৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭৯ সাল মোতাবেক শনিবার দিন। সকল সার্টিফিকেটে ১৯৮২ সালের ৮সেপ্টম্বর বুধবার দিন।তবে আমার জন্মের দিন ঘোর বৃষ্টি ছিল।হালকা বাতাস ছিল।ঐ দিন আসরের আগে পরে আমি জন্মেছিলাম।
প্রথম তারিখ অনুযায়ী আজ থেকে ১৪৯৭৬ দিন পূর্বে পৃথিবীর আলো বাতাসে আমার প্রথম চিৎকার। শেষোক্ত তারিখ অনুযায়ী ১৩৮৮০ দিন পূর্ব থেকে মানব সমাজের সাথে আমার বসবাস।
৮ ভাই বোনের সংসারে পরিবারের ছোট্ট সদস্য বলে আদর যত্ন আর আধিক্যেতা বেশিই ছিল।শিশুকালে ঘরোয়া পড়াশোনায় তত একটা মন বসত না আমার।তাই স্কুল জীবনের শুরুটা একটু বিলম্বিত ছিল। অবশ্য আমাদের সময় ছেলে মেয়েরা আজকের শিশুদের মত এডভান্স ছিলনা। মা বাবারাও সন্তানের পড়াশোনার ব্যাপারে এত সিরিয়াস ছিলেন না।তবে আমার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রেজাল্ট সব সময়ই ভাল ছিল। ক্লাসের পড়া ক্লাসেই শেষ করতাম। হোম ওয়ার্ক বলে কিছুই থাকত না।খুব ভোরে পাখির কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভাঙ্গত।হাতমুখ ধুয়ে পড়ার টেবিলে বসতাম।মাগরিবের আযান হলে নীড়ে ফেরা পাখিদের সাথে আমিও ঘরে ফিরতাম।পড়া লেখার জন্য নিজস্ব একটা রুটিন ছিল।পড়তে ভাল লাগতো।লেখতে ভাল লাগতো।রাত ১১টায় রেডিও শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়তাম।আর এ কারণেই স্কুল কলেজ জীবনে কখনো সেকেন্ড হতে হয়নি।

জীবনে কী হতে চেয়েছি,কী হয়েছি, কী পেতে চেয়েছি,কী পেয়েছি আর কী পাইনি?কুসুমিত মনের সে আকাশ কুসুম চিন্তা আজ আর মাথায় নেই। এক সময়তো কত কিছুই ভাবতাম। গুলশান বনানীতে বিশাল এক বাড়ি থাকবে,বাড়ির সামনে বাগানে গোলাপ,টগর,চামেলি ; বিদেশি কুকুর, সর্বাধুনিক ফ্যাশনের গাড়ি আরো কত্ত কী! আজ এসব ভাবলে মনে মনে ভীষণ লজ্জা বোধ করি।বাস্তব আর কল্পনা এক নয়।বয়স বাড়ার সাথে সাথে নির্মম কঠোর বাস্তবকে অনুধাবন করতে পেরেছি। স্বার্থ কে ত্যাগ করতে না পারলেও অন্ধ স্বার্থকে ত্যাগ করার রুচিবোধ কিছুটা জন্মেছে বৈকি। শিশু নিজে স্বপ্ন দেখার আগে তাকে নিয়েও এই সংসার সমাজ আর দেশের কিছু স্বপ্নবাজ মানুষ বড় কোনো স্বপ্ন দেখে।এই স্বপ্নবাজ মানুষগুলো হয় সন্তানের পিতা মাতা,কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষক এবং এমন আরো অনেকে। আমার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণের নিকটও আমি চিরঋণী। কারণ ওনারা আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করতে। পরম যত্নে ভালো কিছু শেখাতেন। আমার ভাল হোক মনে প্রাণে তা চাইতেন।এমনটি চাইতেন বলেই আমার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা জীবন সমাপান্তে সার্টিফিকেটে বয়স একটু কমিয়ে দিয়েছিলেন। একটু নয় পুরো তিন বছর।আজ সকল শিক্ষকগণের নাম মনে না পড়লেও ওনাদের স্নেহ আর আর্শীবাদ মাখা সুন্দর মুখগুলো আমার চোখে ভাসে।সেদিন আর্শীবাদ করে বলেছিলেন, “তুমি অনেক দূর এগোবে।তুমি অনেক বড় হবে।আমাদের দোয়া তোমার পাশে থাকবে।” সেই সকল মহান শিক্ষকগণের কাছে আমার ঋণ আছে।
মাতৃগর্ভ থেকে পৃথিবীর অালো বাতাসের সংস্পর্শে অাসার পর আমার প্রথম চিৎকার যেই গ্রামের মানুষ প্রথম শুনতে পেলো তার নাম বল্লভপুর।আমি আমার জন্মের জন্য পিতা হাজী আব্দুল জব্বার এবং মাতা জাহানারা বেগম এর নিকট চির ঋণী।আরো ঋণী বল্লভপুর গ্রামের সহজ সরল মানুষগুলোর প্রতি,যাঁদের সান্নিধ্যে স্নেহ ও ভালোবাসায় কেটেছে আমার শৈশব ও কৈশোরের মধুময় অনিন্দ্য সুন্দর দিনগুলো,চাঁদমাখা রাতগুলো।এখানকার সকলের কাছে আমার ঋণ আছে।

আমার জন্ম জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া,আমার জন্ম উপজেলা কসবা এবং আমার জন্ম গ্রাম বল্লভপুরের আলো বাতাস,প্রকৃতি ও সুধীজনদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। কারণ,এখানকার পরিবেশ, সংস্কৃতি, প্রকৃতি ও মানুষের স্নেহ,ভালোবাসাই আমাকে কবি ও লেখক হতে সহায়তা করেছে।তাই আমার সৃষ্টি কর্মের জন্য যদি সামান্যতম প্রশংসা/সম্মাননা যাহাই পাই এই প্রাপ্তির ভাগিদার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সবাই।এখানকার আলো বাতাস প্রকৃতি সকলের কাছে আমার ঋণ আছে।

আজ বিশ্ব বাবাা দিবস:

মাথার উপর বটবৃক্ষের মতো ছায়ার নাম বাবা

এস এম শাহনূর | ২১ জুন ২০২০ | ৪:১১ পূর্বাহ্ণ

মাথার উপর বটবৃক্ষের মতো ছায়ার নাম বাবা

ভাল হোক,মন্দ হোক বাবা আমার বাবা
পৃথিবীতে বাবার মত আর আছে কেবা।’

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নির্ভরতার জায়গা বাবা।
পবিত্র কোরআনে পিতা-মাতার সম্মান প্রসঙ্গে বলা আছে, তাদের সঙ্গে উহ! শব্দ পর্যন্ত করো না।হাদিস শরীফে এরশাদ হয়েছে,”মায়ের পদতলে সন্তানের জান্নাত।পিতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি।” পিতা সন্তানের মাথার ওপর বটবৃক্ষের ছায়ার মতো যার স্নেহ অবারিত ধারায় শুধু ঝরতেই থাকে। “পিতা স্বর্গ পিতা ধর্ম পিতাহী পরমং তপঃ পিতরী প্রিতিমাপন্নে প্রিয়ন্তে সর্ব দেবতা।” পিতাই ধর্ম, পিতাই স্বর্গ, পিতা পরম তপস্যার। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এই মন্ত্র জপে বাবাকে স্বর্গজ্ঞান করে শ্রদ্ধা করেন।

বাবা- প্রতিটি সন্তানের চোখে প্রথম আদর্শের নাম।
আদর-শাসন আর বিশ্বস্ততার নাম বাবা।
বাবা – চির আপন, চিরন্তন এক সম্পর্কের  নাম।
মাথার উপর বটবৃক্ষের মতো ছায়ার নাম বাবা।

হাসি মুখে সন্তানের আবদার পূর্ণকারীর নাম।

যার ব্যক্তিত্ব, সরলতা আকৃষ্ট করে প্রতিটি সন্তানকে।
তবে পিতার বুকফাটা আর্তনাদ না শোনার মতো সন্তানও এই সমাজে আছে।
‘ছেলে আমার মস্ত মানুষ, মস্ত অফিসার
মস্ত ফ্ল্যাটে যায় না দেখা এপার-ওপার।
নানান রকম জিনিস আর আসবাব দামি দামি
সবচেয়ে কমদামি ছিলাম একমাত্র আমি
ছেলে আমার, আমার প্রতি অগাধ সম্ভ্রম
আমার ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম’-নচিকেতার এই গানের বাস্তবতা মিলবে গাজীপুরের বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রে।

অথচ,একদিন অসুস্থ শরীরের ক্লান্তিকে পাত্তা না দিয়ে একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য,অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানসহ সব মৌলিক চাহিদা ও নিরাপত্তার জন্য ছুটে চলেছেন দিন রাত।

বছর ঘুরে আজ এসেছে সেই দিন, যেদিন বাবার পা ছুঁয়ে, বুকে জড়িয়ে ধরে বলা যায়- ‘বাবা, তোমায় অনেক ভালোবাসি’।

বাবার চোখে সব সন্তানই সমান।তবে
সব মেয়েই প্রথম যে পুরুষের ব্যক্তিত্বে আকৃষ্ট হয়,তার নাম বাবা।
কন্যা সন্তানরা যার কাছে একটু বেশিই আদর পান তার নাম বাবা।
মেয়ের বিয়ের সময় যিনি সবচেয়ে বেশি কষ্ট পান তার নামও বাবা।
কন্যা সন্তানের যার প্রতি গভীর অনুভূতি থাকে তার নামও বাবা।
হিন্দুরীতির বিয়েতে যখন বাবা ‘কন্যাদান’ করেন, কিংবা মুসলিম পিতার কন্যাও যখন স্বাম২র হাত ধরে পিতৃগৃহ ত্যাগ করে তখন তার কান্নায় আর্দ্র হয়ে ওঠেন উপস্থিত সবাই।আর সে জন্যই বিদায় বেলায় নিঃশব্দ অশ্রু গেয়ে ওঠে- ‘আমি যাচ্ছি বাবা, আমি যাচ্ছি/চোখ মুছে মুখ তোলো/স্নেহের বাঁধন খোলো/এবার তোমায় দিতেই যে হয়/যাবার অনুমতি,/বাবা খেয়াল রেখো/ তুমি তোমার প্রতি’।

এনসাইক্লোপিডিয়া জানাচ্ছে, জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্বের প্রায় ৭৪টি দেশে বাবা দিবস পালিত হয়। তৃতীয় রোববার হিসেবে এ বছর ২১জুন পালিত হচ্ছে বাবা দিবস।
বাবা তোমাকে ভালোবাসি’ কথাটি বলার জন্য একটি দিন প্রয়োজন- প্রথম তা অনুধাবন করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের নিকটবর্তী ছোট্ট শহর ক্রেসটনের বাসিন্দা সোনোরা লইস ডট নামের এক তরুণী। সৎমায়ের কাছে মেয়ের অবহেলা হতে পারে- এ শঙ্কায় সোনোরার বাবা উইলিয়াম জ্যাকসন স্মার্ট স্ত্রীর মৃত্যুর পর আর বিয়ে করেননি। সোনোরাকে বড় করতে নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দেন। সোনোরা বাবার এই ত্যাগকে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। বাবার প্রতি তার গভীর ভালোবাসার কথা সবাইকে জানাতে চেয়েছিলেন। তাতেই মাথায় আসে ‘বাবা দিবস’ পালনের চিন্তা। উইলিয়াম স্মার্টের মৃত্যুবার্ষিকী ৫ জুন। প্রথম ‘ফাদারস ডে’ পালন করা হয় ১৯ জুন।
ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, ১৯০৮ সালে প্রথম বাবা দিবস উদযাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্টে ৫ জুলাই এই দিবস পালন করা হয়। ১৯৬৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসন জুন মাসের তৃতীয় রোববারকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাবা দিবস হিসেবে নির্ধারণ করেন। ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন প্রতিবছর জাতীয়ভাবে বাবা দিবস পালনের রীতি চালু করেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং স্যাটেলাইট যুগের সুবাদে বাবা দিবস ঘটা করেই পালিত হচ্ছে।

বাবার জন্য প্রতিটি দিবস, তবু বিশেষ এই দিনটিতে আসুন বলে দিই-
‘বাবা, তোমার প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। তোমার কারণে আজকের এই আমি’।

আর যাদের পিতা এই জগতে বেঁচে নেই দুহাত তুলে তাদের জন্য এই বলে দোয়া করি-
রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি সাগিরা।

কেন বিপথগামী আজকের তরুণ? -এস এম শাহনূর

| ১৫ জুলাই ২০১৯ | ১০:৪১ অপরাহ্ণ

কেন বিপথগামী আজকের তরুণ? -এস এম শাহনূর

আজকের তরুণ আগামীতে দেশ ও জাতির কর্নধার।আর এ তরুণ প্রজন্মের অবক্ষয়ের মূল কারণ গুলোর মধ্যে রয়েছে,
(ক)সামাজিক সমবেদনার অভাব।
(খ)বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যার কুপ্রভাব।
(গ)সমাজে জীবন্ত আদর্শ ও মূল্যবোধের অভাব।
(ঘ)উপযুক্ত নৈতিক শিক্ষার অভাব।
(ঙ)পরিবেশগত প্রতিক্রিয়া।
(চ)পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা।
(ছ)এবং সর্বোপরি কুরআন ও হাদিস নির্দেশিত অমোঘ নিয়মাবলী দ্বারা জীবন পরিচালিত না করা।
উপরোক্ত মৌলিক বিষয়াদির সাথে আরো বেশ কিছু প্রসঙ্গ আলোচনার দাবিদার।
★★চরিত্র গঠনঃ-‘চর'(চলা) ধাতু থেকে চরিত্র শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে ।এর অর্থ হচ্ছে চলা।”এ চলা হচ্ছে ব্যক্তিগত জীবনে সুন্দর ভাবে চলা এবং সমাজ জীবন কে সুন্দর ভাবে চালানো।”–(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর) ”The crown and glory of life is character ”. চরিত্রবান ব্যাক্তি দেশ ও জাতির গৌরব।হাদিস শরীফে আছে-”তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে ঈমানদার সেই ব্যক্তি যার আখলাক(চরিত্র )সবচেয়ে ভাল।”অন্যত্র এরশাদ হয়েছে –‘চরিত্রের উৎকর্ষ অনুযায়ী আল্লাহ পাক মানুষ কে উন্নতি দান করে থাকেন ।”ইহা মানব জীবনের শ্রেষ্ঠ অলংকার।অন্যদিকে চরিত্রহীন তথা দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য।
★★সততাঃ- সততা মানব জীবনের শ্রেষ্ঠ গুণ।”Honesty is the best policy.” ইহা জীবনকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে তোলে। আজ কাল মানুষের মধ্যে এ একটি গুণের বড় বেশি অভাব।আন্তরিকতা,স্পষ্টবাদীতা, সদাচার প্রভৃতি গুণের সমষ্টির যে চির উন্নত নাম ”সততা”তা দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে।

✪ নৈতিকা: নৈতিকতা একটি মহৎ গুণের নাম।মানুষের কথা ও কর্মে উত্তম আচরণ ও রীতিনীতির অনুশীলনের নাম নৈতিকতা। এটি কোন প্রকার আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়না।ল্যাটিন শব্দ Moralities (অর্থ আচরণ বা চরিত্র) থেকে ইংরেজি Morality শব্দের উদ্ভব যার বাংলা প্রতিশব্দ নৈতিকতা। যে গুণ মানুষকে অন্যায়, অসত্য ও অনাচার থেকে বিরত রাখে এবং সত্য বলা ও মহৎ কর্মে নিয়োজিত করে সেই বায়বীয় গুণটির নামই নৈতিকতা।’Morality is genetic’ ধর্মীয় মূল্যবোধ মানুষকে নৈতিকতা শিক্ষা দেয়। নৈতিকতা ছাড়া মানুষ আর মানুষ থাকেনা।

★★শিষ্টাচারঃ-”মানব জীবনকে স্বাচ্ছন্দ্যে প্রবাহিত করার মৌল উপাদান হচ্ছে শিষ্টাচার।”শিষ্টাচার অর্থ হলো শিষ্ট বা মার্জিত আচরণ।মানুষের কথায়,আচরণে, চালচলনে যে ভদ্রভাব, সৌজন্যবোধ ও শালিনতার পরিচয় পাওয়া যায়, তাই সামগ্রিক অর্থে শিষ্টাচার।ইহা মানুষ কে ঔদ্ধত্যের পরিবর্তে বিনয় আর হিংসার পরিবর্তে প্রীতি শেখায়।” Courtesy costs nothing but buys everything.” শিষ্টাচারের গুণে মানুষের হৃদয়ে খুব সহজেই স্হান করে নেওয়া যায়।মানুষের শিক্ষাদীক্ষা,রুচিশীলতা,চারিত্রিক আভিজাত্য শিষ্টাচারের মাধ্যমেই প্রকাশ পায়।কবে আমাদের চরিত্র হবে ফুলের মত নিষ্পাপ?সততার চাদরে মোড়ানো হবে জীবন আর শিষ্টাতাকে করব আলিঙ্গন!!
রাজনীতির নামে মিথ্যাচার, সমাজ সেবার নামে স্বেচ্ছাচার,আদর্শের নামে প্রতারণা,বিনিময়ের নামে ঘুষ বা দুর্নীতি,মাদক দ্রব্যের মরন ছোবল, লাল ফিতার দৌরাত্ম্য,না পাওয়ার বেদনা , বেকারত্বের আহাজারি থাকবে।সাগরের দক্ষ মাঝির মত বড় বড় ঢেউয়ের মাঝেও সাবধানে বাইতে হবে তরী।পৌঁছতে হবে জীবনের অভিষ্ট গন্তব্যে । তাই আসুন সমস্যার সমাধান খুজি।মনোযোগ দেই নিন্মোক্ত বিষয়গুলি দিকে—-
★★জগতে বড় হতে হলে অসাধারণ প্রতিভাবান হতে হবে এমন কোন কথা নেই। কারণ,ছোট বেলাই পড়েছি ”Industry is the mother of good luck. ”প্রথম চেষ্টায় সফলতা লাভ করা কঠিন ব্যাপার।ইংরেজি আরেকটি প্রবাদ মনে রাখা দরকার- ”Failure is the pillar of success.”মানব জাতির চুড়ান্ত সংবিধান মহাগ্রন্থ আল কুরআন বলছে, ”মানুষের জন্য শ্রম ব্যতিরেকে আর কিছুই নেই।”রাসূল (সা:) বলেন, ”নিজ হাতে উপার্জিত(বৈধ পথে)খাদ্যের চেয়ে উত্তম খাবার আর কিছুই নেই।” তিনি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মানব হওয়া সত্বেও মাঠে মেষ চরিয়েছেন,ইহুদির বাড়িতে কূপ থেকে পানি তোলার কাজ করেছেন ।”You are to earn your living by sweat of brow.”(Bybel) অপরের করুণা ছাড়া আত্ববিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে নিজের কর্ম দ্বারা অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হবে ।কারণ -”Self help is the best help.”
★★মানব জাতির জন্য বিধাতার শ্রেষ্ঠতম দান হচ্ছে সময়।”Time and tide wait for none.” প্রতিটি মুহূর্ত জীবনের অসীম সম্ভাবনা নিয়ে উপস্থিত হয় এবং তার ঐশ্বর্য গ্রহন করে মানব জীবনকে ধন্য করার আহ্বান জানায়।”Time is life,life is time. Balance between life and time can help one reach the highest apex of success.” (M.K.Ghandi)

★★নিয়মানুবর্তিতাই মানব জীবনকে সুন্দর ও সার্থক করে তোলেছে। ” Discipline is the keystone to success which compulsory to follow balance the systems.” (Nepoleon)অন্যান্য প্রাণী থেকে মানুষের পার্থক্য হচ্ছে সে বুদ্ধিমান ও নিয়মের পৃজারী।
Discipline is the fair gifts by God,
It always modefys human lot.
It brings prosperity,it brings honour.
It brings fame from every corner.(COLOR OF MY LOVE /S.M.Shahnoor)

এই লেখাটির মাধ্যমে আল্লাহ্‌ পাক তরুণ সমাজ তথা গোটা মানব জাতির হিদায়েতের ব্যবস্থা করে দিতে পারেন ।কারণ, তিনি বড়ই হিকমতওয়ালা।আমীন।

একটি চমৎকার মানপত্র

মানপত্র

বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য কবি হিসেবে এস এম শাহনূর এর শুভাগমন উপলক্ষে বল্লভপুর আইডিয়াল স্কুলের শিক্ষiক-শিক্ষিকা ও ছাত্র-ছাত্রীদে পক্ষ থেকে-প্রাণঢালা অভিনন্দন।

হে বিশ্ববাঙালি,

সারাদেশে এখন পাখি ডাকা, ফুল ফোটা বসন্তের গৌরবময় উপস্থিতি। গ্রাম-বাংলার সর্বত্রই বাহারি ফুলের মৌ মৌ গন্ধ। চারদিক তাই উৎসবে মুখর। বসন্তের এমনি এক মায়াবী লগ্নে আমরা যখন কাঙ্ক্ষিত প্রিয়জনকে কাছে পাওয়ার একান্ত বাসনায় অপেক্ষার প্রহর গুণছিলাম; ঠিক তখনি এক অনাবিল আনন্দের ঊর্মীদোলায় আমাদের আন্দোলিত করে এ ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানে আপনার শুভাগমন। আপনার আগমনে বনে বনে যেন আজ পুষ্পের বাহুল্য; সেই সাথে ভ্রমরের গুঞ্জনধ্বনি যেন আপনার আগমন উল্লাসেই মুখর। আপনাকে কাছে পেয়ে আমরা আজ ধন্য। আপনি আমাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও প্রাণঢালা অভিনন্দন গ্রহণ করুন।

হে কবি,

সবকিছুর ঊর্ধ্বে আপনার যে পরিচয় সেটি হলো আপনি যথার্থই কবি। যে কবির হৃদয় অসীমের আনন্দ খুঁজে বেড়ায় , যে কবি হৃদয়ে অপার আনন্দ – বেদনায় নিত্য ভাবের কুসুম ফোটে, আপনি ধারণ করেছেন সেই কবিচিত্ত। আপনার এ কবি হৃদয়ের কাছে আমাদের অনেক প্রত্যাশা।

হে জ্ঞানতাপস,

বাংলা সাহিত্যাকাশে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বহু গুণী কবি, সাহিত্যিক, উপন্যাসিক ও গবেষক তাঁদের বলিষ্ঠ অবদান রেখেছেন। কিন্তু নূরনগর পরগণার এই অঞ্চলে বহু গুণী মানুষের জন্ম হলেও দীর্ঘদিন ধরে কোন কবি সাহিত্যিকের জন্ম হয়নি। গত দুই দশক ধরে যে নিভৃতচারী গুণী মানুষটি বাংলা সাহিত্যাকাশে মিটমিট করে জ্বলে নিজের অস্তিত্বের জানান দিচ্ছেন,তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তারুণ্যের কবি খ্যাত,লেখক ও গবেষক এস এম শাহনূর।আপনার আলোকিত আবির্ভাবে আমরা ধন্য।

হে ছান্দসিক, ,

কবিতা হৃদয়ের কথা বলে আর কবিরা দেয় সেই শুভ সংবাদ। যে সংবাদে হৃদয় হয় উদ্বেলিত। উদ্বেলিত ভালোবাসার আরেক নাম কবি এস এম শাহনূর। আপনার লেখনীর রূপ, রস,গন্ধ আর নানা বৈচিত্র্যতা কখনো আনন্দ ছুঁয়ে কখনো প্রেমের রৌশনীতে প্রোজ্জ্বল হয়ে কখনো বা বিরহকাতর দহনানলে প্রেয়সীকে খুঁজে পাবার নান্দনিক ভঙ্গিতে পাঠক মাত্রই আপ্লূত হয়। আপনার মত কাব্য মনস্ক মানুষদের জন্যই সমাজ সংসারে উচ্ছলতা আছে,আছে প্রাণ চঞ্চলতা।ভবিষ্যতেও আপনাদের ভালোবাসার চন্দনে বাংলা সাহিত্য হবে সমৃদ্ধ।

হে শিল্পী,

আমরা আপনাকে পেয়েছি কাব্যের মাঝে, পেয়েছি আপনার সৃষ্টির মাঝে, আজ পেয়েছি সেই সম্পূর্ণ আপনাকে। আপনি ভালোবেসেছেন এ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষকে, প্রকৃতিকে। রূপ-রস-গন্ধ দিয়ে আপনি রাঙিয়েছেন আপনার শিল্পীসত্তাকে। তাই তো আপনি শিল্পী, কাব্যজগতের নিপুণ কারিগর।

হে অনির্বাণ,

শত ব্যস্ততাকে উপেক্ষা করে আপনি আমাদের মাঝে এসে যে মহানুভবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ।আপনি আবারও আসবেন আমাদের মাঝে, ভালোবাসবেন এমনি করে, শোনাবেন আপনার রচিত কবিতা। পরম করুণাময়ের নিকট আপনার সুন্দর, সুস্থ ও সুখী জীবন এবং দীর্ঘায়ু প্রার্থনা করি। কামনা করি, আপনার লেখনী আপনাকে মহিমার অমর আলোকে উদ্ভাসিত করুক।

আপনারই গুণমুগ্ধ

বল্লভপুর আইডিয়াল স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষার্থীবৃন্দ

১২ই মার্চ ২০২০ইং

মানুষ তোমায় বিনম্র শ্রদ্ধা ও সালাম: এস এম শাহনূর

| ১১ মে ২০২০ | ১:৫৮ অপরাহ্ণ

মানুষ তোমায় বিনম্র শ্রদ্ধা ও সালাম: এস এম শাহনূর

ও মানুষ তুই মানুষ হবি কবে
মৃত্যুর পরে নাকি তার আগে?
আমি পুরুষ,মানুষ হতে পারিনি
খুঁজে ফিরি লিঙ্গভেদ মানুষ খুঁজিনি!
‘মানুষ মানুষের জন্যে,জীবন জীবনের জন্যে’
এ কথা হৃদয়ে লালন করেনি গর্ব অহংকারে,
মানুষের তৈরী কিছুই নেই আজি প্রয়োজনে
মানুষ বন্দী ঘরে,খাঁচার পাখি আকাশে উড়ে।

সমাজে তিন শ্রেণির মানুষ বিদ্যমান। এক শ্রেণির মানুষ বধির নয়,অন্ধ নয়,বাকপ্রতিবন্ধিও নয়;তবু সারাটি জীবন চতুষ্পদ জন্তুর ন্যায় সামাজিকতা ও ধর্মীয় রীতিনীতির বাহিরে জীবন যাপন করে।
আরেক শ্রেণির মানুষ অল্প বা অধিক শিক্ষিত কিন্তু মিতব্যয়ী,স্বল্পভাষী,পরোপকারী,সামাজিক ও ধর্মীয় রীতিনীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
অপর আরেক শ্রেণির মানুষ অল্প বা অধিক শিক্ষিত,কিন্তু ওরা ধুরন্ধর, চপল,কপট, আত্ম অহংকারী,ঠকবাজ,সুবিধাভোগী,পরশ্রীকাতর ও সবজান্তা।
আপনি কোন শ্রেণির মানুষ আমি জানি না।তবে প্রথম ও শেষোক্ত দুই শ্রেণির মানুষের জন্য আমার মায়া লাগে।বুকের ভেতর কষ্ট অনুভব করি।ওরা কেন মানুষ হলো না!
মানুষের ইচ্ছা শক্তির কাছে সকল রিপু পরাজিত হতে বাধ্য।
যদি বুঝতে পারেন, কোন কাজ করার জন্য আপনাকে কেউ হিংসা করছে ধরে নিন আপনি সঠিক পথে আছেন।

যদি বুঝতে পারেন, কোন কাজ করার জন্য আপনাকে কেউ ঘৃণা করছে ধরে নিন আপনি ভুল পথে হাটছেন।পথ পরিবর্তন করুন।

যদি বুঝতে পারেন আপনার ভাল কর্মের জন্য আপনাকে কেউ হিংসা করছে,যদি বুঝতে পারেন আপনার মন্দ কাজের জন্য আপনাকে কেউ ঘৃণা করছে।আর যদি ভাল কাজের গতি বাড়াতে পারেন এবং মন্দ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারেন,ধরে নিন আপনি একটি জাগ্রত বিবেক দেহের ভেতর বহন করছেন।নিজেকে নিজে ধন্যবাদ দিন।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বুক ফুলিয়ে বলুন,আমি মানুষ। সত্যিই আপনি মানুষ।খাঁটি মানুষ।আপনার অঢেল ধন সম্পত্তি না থাকুক,সামাজিক রাজনৈতিক পরিচয় না থাকুক, উচ্চতর প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি না থাকুক, আমি আপনাকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই।

আজ মহান মে দিবস: শ্রম অধিকারের দিন

ঘাম ঝরানো শ্রম উপার্জনের চেয়ে উত্তম দ্বিতীয়টি আর নেই: এস এম শাহনূর

| ০১ মে ২০২০ | ১০:১৯ পূর্বাহ্

ঘাম ঝরানো শ্রম উপার্জনের চেয়ে উত্তম দ্বিতীয়টি আর নেই: এস এম শাহনূর

পরিশ্রমে ধন আনে,পুণ্য আনে সুখ”।‘পরিশ্রমই সৌভাগ্যের প্রসূতি’। কাজেই পরিশ্রম কোন ছোট কাজ নয়।সমাজ সংসার ও পার্থিব জগতে কোনো উন্নতি শ্রম ব্যতিরেকে সম্ভব হয়নি।

হজরত আদম (আ:) থেকে শুরু করে সর্বশেষ মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সঃ) পর্যন্ত সকল নবী-রাসূল নিজ হাতে কাজ করতেন। স্বহস্তে কাজ সম্পাদন করা অতিশয় উত্তম। রসূলুল্লাহ (সঃ) শ্রমের প্রতি অত্যধিক গুরুত্ব আরোপ ও শ্রমিকের দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে বাণী প্রদান করে বলেছেন, ‘উত্তম উপার্জন হলো (পেশাজীবী) কর্মীর হাতের (শ্রমের) উপার্জন, যখন সে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে।’
নবী করিম (সঃ) নিজে শ্রম ব্যয় করে জীবিকা অর্জন করতেন। একদা তিনি তাঁর ফোস্কা পড়া পবিত্র হাত দেখিয়ে সাহাবায়ে কেরামের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘এটি এমন একটি হাত, যা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল পছন্দ করেন।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘নিজের হাতের কাজ ও শ্রম দ্বারা উপার্জিত খাদ্য খাওয়া অপেক্ষা উত্তম খাদ্য কেউ খেতে পারে না। হজরত দাউদ (আঃ) নিজের হাতের শ্রমের উপার্জিত খাবার খেতেন’ (বুখারী)।

মানুষের জীবিকা অর্জনের প্রধান উপায় হচ্ছে শ্রম। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘আর এই যে মানুষ তা-ই পায় যা সে করে। আর তার কর্ম অচিরেই দেখানো হবে; অতঃপর তাকে দেয়া হবে পূর্ণ প্রতিদান’ (সূরা নাজম: ৩৯-৪১)।
ইসলামী বিধানে শ্রমিক, চাষি এবং অন্যান্য শ্রমজীবীকে কেউ বিনা পারিশ্রমিকে খাটাতে পারবে না। তাদের ন্যায়সঙ্গত যথার্থ পারিশ্রমিক তাদের দিতেই হবে।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘প্রত্যেকের মর্যাদা তার কাজ অনুযায়ী, এটা এজন্য যে, আল্লাহ প্রত্যেকের কর্মেও পূর্ণ প্রতিফল দিবেন এবং তাদের প্রতি অবিচার করা হবে না।’ (সূরা আহ্কাফ: ১৯)।
মানুষের শ্রম করার অধিকার অত্যন্ত পবিত্র ঈমানী দায়িত্ব।পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখবে’ (সূরা যিলযাল:৭-৮)।
ইসলাম প্রতিটি মানুষের শ্রমের ফলভোগ করার অধিকার স্বীকার করে। মহান অাল্লাহ ঘোষণা করেছেন, ‘সৎকর্মশীলদের পুরস্কার কতই না উত্তম! ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মুমিনদের শ্রমফল নষ্ট করেন না’ (সূরা আল ইমরান: ১৩৬ ও ১৭১)।
রসূলুল্লাহ (স) শ্রমিককে মজুরি দান করার পরও তাকে লাভের অংশ দেয়ার জন্য উপদেশ দিয়ে বলেছেন, ‘কর্মচারীদের তাদের কাজের লভ্যাংশ দাও। কেননা আল্লাহর শ্রমিকদের বঞ্চিত করা যায় না।’ (মুসনাদে আহমদ)
নবী করিম (স) শ্রমিকদের প্রতি মালিকের কর্তব্য ও শ্রমজীবীদের যেসব অধিকার নির্ধারণ করেছেন তন্মধ্যে গুত্বপূর্ণ অধিকার এই যে, তাকে শুধু পরিপূর্ণ মজুরি প্রদান করা যথেষ্ট নয়, বরং যতটা সম্ভব ত্বরিত মজুরি পরিশোধের কথাও বলা হয়েছে। মহানবী (স) বাণী প্রদান করেছেন, ‘শ্রমিককে শ্রমজনিত ঘাম শুকানোর আগেই অবিলম্বে তার মজুরি দাও’ (মুসনাদে আহমাদ)।
মজুরি না দেয়া বা কাজ অনুপাতে মজুরি কম দেয়াও ইসলামে নিষিদ্ধ।
রসূলুল্লাহ (স) ইরশাদ করেছেন, ‘তিন ব্যক্তির ওপর আল্লাহ কিয়ামতের দিন অসন্তুষ্ট হবেন। তাদের একজন হচ্ছে যে ব্যক্তি কোনো শ্রমিক নিযুক্ত করে তার দ্বারা পূর্ণ কাজ করিয়ে নেয়ার পর তার মজুরি দেয়নি’ (বুখারী)।
ইসলামী বিধান মতে, অন্যত্র নবী করিম (স) নির্দেশ প্রদান করেছেন যে, ‘কাজের পারিতোষিক নির্ধারণ ব্যতিরেকে কোনো শ্রমিককে কাজে নিয়োগ করবে না’ (বায়হাকী)।
ইসলামী বিধান অনুযায়ী মালিক স্বকীয় শক্তিবলে শ্রমিকের ওপর অতিরিক্ত কাজের বোঝা চাপাতে পারবে না। শ্রম করার অধিকারের পাশাপাশি শ্রমিকের কাজে অবকাশ বা ছুটি তথা বিশ্রাম পাওয়ার অধিকার আছে। কেননা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষের সাধ্যাতীত কোনো কাজ করার দায়িত্ব চাপিয়ে দেননি। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে।’ (সূরা ইনশিরাহ: ৫)
আল্লাহ পাক মালিক ও শ্রমিক সকলকে হিদায়াতের পথে পরিচালিত করুন।

“ভয় কিংবা ভালোবাসা” ও কিছু কথা: এস এম শাহনূর

| ০২ এপ্রিল ২০২০ | ১২:৫৪ অপরাহ্ণ

“ভয় কিংবা ভালোবাসা” ও কিছু কথা: এস এম শাহনূর

কবি ,লেখক আর একজন গবেষক হলেও ডক্টর মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের লেখা বই সম্পর্কে আমার মতামত দেয়ার চেষ্টা করা অনধিকার চর্চা ছাড়া আর কিছুই না ।তবু ভাল লাগা থেকেই এবং পাঠক হিসেবে অন্য একজন মানুষের কাছে তাঁর এ সৃষ্টিশীল কর্ম দায়িত্ব নিয়ে জানান দেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি ।”ফিহা তুমি কই? তোমার জন্য আমি লিখেছি এই কবিতার বই ।”এভাবেই তিনি পাঠকের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেছেন “ভয় কিংবা ভালোবাসা “নামক বইখানা ।অভাগা কাহিনীতে ছন্দের তালে অংক শেখানো হয়েছে ।সন্রাসীদের প্রথম পাঠে স্বরবর্ণ আর ব্যঞ্জনব’ণ শেখানো হয়েছে। টাইগার মানে বাঘ কবিতায় শেখানো হয়েছে ইংরেজি একগুচ্ছ শব্দ মালা ।এছাড়া আরও আছে রাজকন্যা ও রাজপুত্রের কাহিনী ।বুকের ভেতর এক্কেবারে ঠাসা- আছে সলিড ভালোবাসা।শুধু কি তাই ?তিনি লিখেছেন, ধরতে পারি ছুঁতে পারি একটা বন্ধু চাই-ডিজিটাল হাজার বন্ধুর কোনো দরকার নাই!

 

আজ ঘৃণিত এপ্রিলফুল ডে : এস এম শাহনূর

| ০১ এপ্রিল ২০২০ | ৯:৪৯ পূর্বাহ্ণ

আজ ঘৃণিত এপ্রিলফুল ডে : এস এম শাহনূর

আসুন এপ্রিলফুল কি জানি,
কুসংস্কার নয়,সত্যটাই মানি।
পাশ্চাত্য অন্ধ অনুকরণের আরেক নাম -এপ্রিলফুল।একটু পড়াশুনা করলে জানা যায়,মিথ্যা, ঠাট্টা এবং অপরকে কষ্ট দেয়ার মত পাপকাজ এ উৎসব বা দিবসটির সাথে জড়িত।
★দেবী ভেনাসকে ঈগিত করেই হউক।
★স্রষ্টাকে উপহাস করার জন্যই হউক।
★হযরত ঈসা (আঃ)কে ইহুদী কর্তৃক ঠাট্টা বিদ্রূপ করার জন্যই হউক।
★ইসলাম ধর্মে প্রচলিত কাহিনী-এক সময়কার শৌর্যবীর্যে প্রভাবশালী মুসলিমদের খ্রিষ্টানদের নিকট স্পেনে পরাজিত হয়ে তাদের কথা মত মসজিদ আর জাহাজে আশ্রয় নিয়ে জীবনাবসানের কারণেই হউক এপ্রিলফুল সত্যিই ঘৃণিত।

 

বিশ্ব কবিতা দিবস ও প্রত্যাশা: এস এম শাহনূর

| ২১ মার্চ ২০২০ | ৯:৫৩ পূর্বাহ্ণ

বিশ্ব কবিতা দিবস ও প্রত্যাশা: এস এম শাহনূর

আজ ২১ শে মার্চ, বিশ্ব কবিতা দিবস।১৯৯৯ সালে ইউনেস্কোর অধিবেশনে এই দিবস ঘোষণা করার সময় বলা হয়েছিল, “এই দিবস বিভিন্ন জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক কবিতা আন্দোলনগুলিকে নতুন করে স্বীকৃতি ও গতি দান করবে।”

কবিতা হচ্ছে সাহিত্যের প্রাচীনতম একটি শাখা।জন্মায়! কবিতা জন্মায়! কীভাবে জন্মায় একটি কবিতা? কীভাবে বেড়ে ওঠে একটি কবিতা? নাকি ইচ্ছের লালন থেকে বেড়ে ওঠা সবই কবিতা, কবিতার কথা? কবিতা কি চোরা পথ ধরে বেড়ে ওঠা প্রেম ও প্রকৃতির খেলা?গোপন প্রিয়ার চকিত চাহনি? নারী শরীরের সৌন্দর্য বর্ণনা? এমন হাজারো প্রশ্ন আছে কবিতা নিয়ে।কবিতা মানব মনের অনবদ্য ধ্যান ও মননের বহিঃপ্রকাশ; ভাবনার অনুরণন থেকে বেড়ে ওঠা পঙক্তিমালাই কবিতা। কবিতা ভাবপ্রকাশের ভাষা, প্রগাঢ় বোধের নান্দনিক প্রতিচ্ছবি। কবিতা অধিকারের ভাষা, প্রতিবাদের ভাষা। কবিতা ভালোবাসার ভাষা।। কবিতা বলতে কী আবেগের বিজ্ঞানকে বুঝানো হয়ে থাকে? আবেগ ও বিজ্ঞান এ দুটির সমমিশ্রণ ঘটলেই পঙক্তিমালাগুলো কবিতা রূপ ধারণ করে। কবিতা শিল্পের একটি শাখা যেখানে ভাষার নান্দনিক গুণাবলীর ব্যবহারের পাশাপাশি ধারণাগত এবং শব্দার্থিক বিষয়বস্তু ব্যবহার করা হয়। কবিতা হচ্ছে শব্দমাল্যের সুগভীর গাঁথুনি, হৃদয়ের অনবদ্য সুখানুভূতি। কবিতা কখনো কালের সাক্ষী, সমকালের মুখপাত্র, কখনো দগ্ধ হৃদয়ের আর্তনাদ।
বিশ্লেষকদের মতে, কবিতা প্রতিমুহূর্তে আচরণে-আবরণে, আহ্বানে নিজের অস্তিত্ব তথা বোধজাত উপলব্ধি ঠিক রেখে নিজেকে ভাঙ্গে আবার গড়ে।

বাংলা সাহিত্যের জীবন্ত কিংবদন্তি কবিদের অন্যতম একজন কবি অসীম সাহা। একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি অসীম সাহা কে শুদ্ধতার কবি বলা হয়।সাহিত্য জগতের বেশ কিছু সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্মেলনে এই খ্যাতিমান গুণী শিল্পীর সাথে আমার দেখা হয়েছে। উনার জ্ঞানগর্ভ কথা শোনার সৌভাগ্য হয়েছে। জাতীয় শিশু কল্যাণ পরিষদের এক অনুষ্ঠানে কবিতার রূপরেখা নিয়ে চমৎকার বিশ্লেষণধর্মী আলোচনা রেখেছিলেন তিনি। কোনটি কবিতা, কোনটি কবিতা নয়,কবিতা কেমন করে কবিতা হয়? কবির উপস্থাপনায় তা শৈল্পিক ভাবে বিদৃত হয়েছিল।তিনি বলেছিলেন,”কবিতা কিন্তু কোন সহজ পথে কোন সহজ কান্ডারী হয়ে তাকে অতিক্রম করবেন তা কিন্তু নয়।বহুদূর পথ পাড়ি দিতে হয়।
পৃথিবীর বিখ্যাত বিখ্যাত কবিরা কবিতাকে নানান ভাবে বিশ্লেষণ করেছেন।
সংস্কৃত আলোয় কবিরা বলেছেন, এটি একটি অলংকার কাব্য।
আবার কেউ বলেছেন, শব্দের সাথে শব্দের প্রবাহমানই কবিতা।
আবার বিখ্যাত দার্শনিক গোর্জে তিনি বলেছেন,আবেগের শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশই হচ্ছে কবিতা।
কবির বক্তব্য শোনার পরে আমার মনে হয়েছিল কবিতা আসলেই নীল সাগর বুকের ঢেউয়ের মতো, সুন্দর শব্দমালা আর উপমার ঢেউ। যেখানে থাকবে সুন্দর একটি গল্প।হাজার রাতের গল্পে যে গল্প শেষ হয় না, কবিতার একটি মাত্র শব্দ কিংবা দু চারটি লাইনে তা প্রকাশ করা যায়।
১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো এই দিনটিকে বিশ্ব কবিতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এই দিবস পালনের উদ্দেশ্য হল বিশ্বব্যাপী কবিতা পাঠ, রচনা, প্রকাশনা ও শিক্ষাকে উৎসাহিত করা। পূর্বে অক্টোবর মাসে বিশ্ব কবিতা দিবস পালন করা হত। প্রথমে ৫ অক্টোবর এবং বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে রোমান মহাকাব্য রচয়িতা ও সম্রাট অগস্টাসের রাজকবি ভার্জিলের জন্মদিন স্মরণে ১৫ অক্টোবর এই দিবস পালন করা হত।বিভিন্ন দেশে বিভিন্নভাবে পালন করা হবে কবিতা দিবস। কবিতা ছড়িয়ে যাক সকল হৃদয়ে, আবৃত্তি হোক একের পর এক, রচনা, পাঠ ও কবিতা প্রকাশনা উৎসাহিত হোক।

“অতি শৈশব থেকে কবিতা আর আমি একই আলয়ে থাকি
কত চেনাজানা,
অথচ বিধাতার কাছ থেকে কিছু নৈসর্গিক শব্দ পেয়েও
জীবনের শ্রেষ্ঠ কবিতা খানি হলো না রচনা। ”

 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তারুণ্যের কবি এস এম শাহনূর কে সংবর্ধনা প্রদান

আওয়ার কণ্ঠ নিউজ ডেস্ক: | ১৬ মার্চ ২০২০ | ১০:১৭ পূর্বাহ্ণ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তারুণ্যের কবি এস এম শাহনূর কে সংবর্ধনা প্রদান

গত ১২ মার্চ বৃহস্পতিবার,ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার মেহারী ইউনিয়নের বল্লভপুর আইডিয়াল স্কুলের ২০২০ সালের বার্ষিক ক্রীড়া- সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী ও কবি এস এম শাহনূর কে সংবর্ধনা এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।

পবিত্র কুরআন থেকে তিলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়।শুরুতেই ফুলেল শুভেচ্ছা ও উত্তরীয় পরিয়ে দিয়ে অতিথিদের বরণ করে নেওয়া হয়

হাজী মোঃ রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কসবা উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব, মাসুদ উল আলম
প্রধান মেহমান : মোঃ জাহাঙ্গীর আলম
বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও ক্যামিকেল ব্যবসায়ী।
উদ্বোধক:
মোঃ সোলেমান খান
সভাপতি, কসবা প্রেসক্লাব

মহাসচিব
বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশন।

উদ্বোধন শেষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার তারুণ্যের কবি খ্যাত লেখক ও গবেষক, বল্লভপুর গ্রামের কৃতি সন্তান এস এম শাহনূর এর প্রতি মানপত্র পাঠের মাধ্যমে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। মানপত্র পাঠ করেন স্কুলের অধ্যক্ষ আলহাজ্ব মোঃ লিয়াকত আলী আল কাদেরী।প্রধান আলোচকঃ ড.আলহাজ্ব শরীফ সাকী
প্রখ্যাত আইন বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার কর্মী।
বিশেষ অতিথি
জনাব,মোঃ নাজমুুল হক সিকদার
সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার
কসবা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে ছিলেন, জনাব,মোঃ আলম মিয়া
চেয়ারম্যান,
২নং মেহারী ইউনিয়ন পরিষদ।
শরীফ এ কে এম শামসুল হক
সাবেক চেয়ারম্যান, মেহারী ইউনিয়ন পরিষদ।
মুক্তিযোদ্ধা ‘হাজী আব্দুল মান্নান
সাবেক চেয়ারম্যান, কাইতলা ইউনিয়ন পরিষদ।
শেখ আব্দুস সবুর
শিক্ষানুরাগী,
সাব ইন্সপেক্টর অব বাংলাদেশ পুলিশ।
গীতিকার মিলন খান
বাচসাস পুরস্কার প্রাপ্ত লেখক।
কবি আব্দুল আওয়াল
এএসপি,(অব:)
আধ্যত্বিক কবি ও দার্শনিক রেজা সারোয়ার
স্পেস থিওরি ‘র উদ্ভাবক।
প্রফেসর ড. লুৎফর রহমান জয়
চেয়ারম্যান,
জনপ্রিয় চ্যানেল বঙ্গ নিউজ লাইভ।
কবি লোকমান হোসেন পলা
সাংগঠনিক সম্পাদক, কসবা প্রেস ক্লাব।
ডা. রুনা আহমদ
হোমিওপ্যাথি বিশেষজ্ঞ, সাভার।
ইঞ্জিনিয়ার গোলাম সামদানী সোহাগ
রিসার্স এন্ড ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার। ওয়াল্টন গ্রুপ।
মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ভূঁইয়া
এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।
মোঃ সিরাজুল হক (সীমান্ত সিরাজ),
মহাসচিব,
বাংলাদেশ সাংবাদিক ফোরাম ( বিজেএফ) সহ এলার সর্বস্তরোর বিপুল জনগণ উপস্থিত ছিলেন।
ছাত্র ছাত্রীদের হাতে অতিথিরা পুরস্কার তুলে দিয়ে উৎসাহ প্রদান করেন।

সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন স্কুলটির
প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক এস এম শাহাবুদ্দিন।

দ্বিতীয় পর্বে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পুরো অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।

গত দুই দশক ধরে যে নিভৃতচারী গুণী মানুষটি বাংলা সাহিত্যাকাশে মিটমিট করে জ্বলে নিজের অস্তিত্বের জানান দিচ্ছেন,তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তারুণ্যের কবি খ্যাত,লেখক ও গবেষক এস এম শাহনূর।

বাংলা একাডেমি,শাহবাগ পাঠক সমাবেশ কেন্দ্র সহ বাংলাদেশের বহু সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে কবির রয়েছে এক রসালো বন্ধন।

তিনি কসবা উপজেলার,মেহারী ইউপি’র বল্লভপুর গ্রামের গর্বিত সন্তান। “ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ৯টি উপজেলার নামকরণের ইতিকথা”, গবেষণা ধর্মী ঐতিহাসিক প্রবন্ধ “কাইতলা জমিদার বাড়ির ইতিহাস” কাইতলা গ্রামের নামকরণের ইতিকথা, গোয়ালী গ্রামের নামকরণের ইতিকথা ,কসবা উপজেলার”মেহারী ইউনিয়নের ১০টি গ্রামের নামকরণের অলিখিত ইতিহাস”লিখেছেন তিনি।

১৯৮২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর বল্লভপুর গ্রামের এক সম্রান্ত মুসলিম পরিবারে কবির জন্ম। পিতার নাম হাজী আব্দুল জব্বার,(তিনি ছতুরা দরবার শরীফের পীর প্রফেসর আলহাজ্ব আব্দুল খালেক (রঃ) এর একজন একনিষ্ঠ শিষ্য ও ঘুম জাগানিয়া ধর্ম প্রচারক ছিলেন)।মাতার নাম জাহানারা বেগম।(তিনি মুবাল্লিক ও ইসলাম ধর্মপ্রচারক শায়খুল বাঙ্গাল শাহ সূফী সৈয়দ আবু মাছাকিন লাহিন্দী আল কাদেরী(রঃ) এর ভাতিজি)।

ছোটবেলা থেকেই কবির কবিতা ও গল্প লেখায় হাতে খড়ি।আবৃত্তি,উপস্হিত বক্তৃতা,বিতর্ক ও নিজের সৃষ্টিশীল লেখার জন্য স্কুল,কলেজে,উপজেলা,জেলা, বিভাগীয় ও জাতীয় পর্যায়ে অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।ছাত্র জীবনে তিনি ছিলেন প্রতি পরীক্ষায় ফার্স্ট হওয়া অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র।তিনি ১৯৯৭ সালে কুমিল্লা বোর্ড স্কলারশীপ সহ এস এস সি,১৯৯৯ সালে এইচ এস সি এবং ২০০৩ সালে ব্যাচেলর অব সোসাল সায়েন্স ডিগ্রি লাভ করেন।বিদেশে Marine and Warfare Academy of China.থেকে উচ্চতর প্রযুক্তি বিষয়ে পড়াশোনা করেন। ব্যক্তি জীবনে অত্যন্ত সাবলীল,কোমল, মিষ্টভাষী ও ভ্রমণ বিলাসী।কবির সহধর্মিনী মিসেস আমেনা শরীফ শাহীন একজন নিষ্ঠাবান সরকারী অডিট কর্মকর্তা।একমাত্র কন্যা সন্তানের নাম- সামীহা নূর জারা।

কর্মজীবনে ভূ মধ্যসাগর ঘিরে জাতিসংঘের ইউনিফিল(UNIFIL) এর মেরিটাইম টাস্ক ফোর্সে দীর্ঘ সময় কর্মরত ছিলেন। মেধার কারণে চষে বেড়িয়েছেন চীন,জাপান,ভিয়েতনাম,মালয়েশিয়া,ইন্দোনেশিয়া,দুবাই,ভারত,মালদ্বীপ,সিংগাপুর, লেবানন,তুরস্ক,সাইপ্রাস; ইউরোপ-এশিয়া সহ পৃথিবীর নানান দেশ।
পত্রিকায় প্রকাশিত প্রথম কবিতা “অগ্নি বাণী” ১৯৯৪ সালে এবং বেতারে “স্বপ্ন দেখার নেইতো মানা’কবিতা প্রচারিত হয় ১৯৯৬ সালে।২০০৫ সালের একুশে বই মেলায় তাঁর ১০১ টি কবিতা সম্বলিত “স্মৃতির মিছিলে”নামক প্রথম কাব্য গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। যা পাঠক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করে।দেশ বিদেশের নানান পত্রিকা ও সাময়িকীতে তাঁর বাংলা ও ইংরেজীতে লেখা মুদ্রিত হয়েছে।

পুরস্কার ও সম্মাননাঃ কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি জাতিসংঘ শান্তি পদক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অলিখিত ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও গবেষণার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্মেলনে বিশ্ববাঙালি সম্মাননা ২০১৯,সকালের সূর্য সাহিত্য বাসর সম্মাননা ২০১৯,কসবা উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক গুণীজন সংবর্ধনা,গাঙচিল ছন্দ বিশারদ সম্মাননা,কলম সৈনিক সাহিত্য পুরস্কার,কবি ও কবিতার ভুবন কবিরত্ন সম্মাননা এবং অমর একুশে সাহিত্য পুরস্কার।

মুজিব বর্ষ কি,তাৎপর্য ও প্রত্যাশা: এস এম শাহনূর

| ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ৯:৪০ অপরাহ্ণ

মুজিব বর্ষ কি,তাৎপর্য ও প্রত্যাশা: এস এম শাহনূর

“একটি বজ্র কণ্ঠ, তর্জনীর একটি বজ্র নিনাদ
মিটিয়ে দিলো পলাশীর পরাজয়ের অপবাদ।
টুঙ্গি পাড়ার দামাল ছেলে জাতির জনক বঙ্গবীর
শোষিত বাঙালীর নেতা তিনি চির উন্নত শির।
খোকার হাতে বাঙালী লিখল বিজয়ের ইতিহাস,
অবাক পৃথিবীর সবাক কথন সাবাস সাবাস।”

শেখ মুজিবুর রহমান। ‘শেখ মুজিব’ নামেও পরিচিত। সংক্ষিপ্তরূপে বলা বা লেখার জন্য অনেকে ‘শেখ মুজিব’ শব্দটি ব্যবহার করে থাকেন। ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটির ব্যবহার আরও বেশি। যারা বঙ্গবন্ধু বা শেখ মুজিব শব্দ ব্যবহার করে, তারা শেখ মুজিবুর রহমান শব্দ বা নাম ব্যবহার করে না। এমনকি একই সঙ্গে দুটি নাম ব্যবহারের প্রয়োজন থাকে না। আরও একটি সম্প্রদায় ‘শেখ সাহেব’ শব্দ ব্যবহার করে। শেখ সাহেব শব্দ ব্যবহারের আরেকটি তাৎপর্য আছে। বিশেষত শেখ মুজিবুর রহমানের সামসময়িক (সমসাময়িক শব্দটি বহুল প্রচলিত হলেও ভুল) রাজনীতিকরা শেখ সাহেব শব্দটি বেশি ব্যবহার করে থাকেন। এটি শেখ মুজিবুর রহমানের জীবদ্দশা থেকে এখনও প্রবীণ রাজনীতিকদের মধ্যে চালু আছে।

মুজিব নামটা শুনলে চোঁখের সামনে ভেসে ওঠে সাদা পরনে পাঞ্জাবি-পায়জামা সাথে কালো ওয়েস্ট কোট, চোঁখে কালো মোটা ফ্রেমের চশমা। যাঁর মধ্যে দিয়ে দেখা যায় চকচকে ঝকঝকে শানিত একজোড়া চোঁখ। অতি সাধারণ পোশাক পরিহিত একজন অসাধারণ মানুষের ছবি। সেই মানুষের ছবি জেগে ওঠে যাঁর হৃদয় ছিল আকাশের মত বিশাল, যাঁর সকাল হত দেশের মানুষের কথা মনে নিয়ে, যে চোঁখে ঘুম নামতো দেশের আপামর মানুষের প্রতি ভালবাসা নিয়ে।

সেই মানুষটা আমাদের বাঙ্গালি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান, আপামর জনতার ভালবাসা তাঁকে শুধু জাতির পিতাই করেনি করেছে বন্ধু,বাংলার বন্ধু, বাংলার মানুষের বন্ধু, তিনি আমাদের বঙ্গবন্ধু। যাঁর প্রেরণায় বিনা অস্ত্রে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সাথে সমুখ সমরে নেমে ছিল বাঙলার আমজনতা। সাথে ছিল শুধু একবুক সাহস, আর এই সাহস জুগিয়েছিলেন আমাদের বাঙ্গালার বন্ধু আমাদের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর ঋণ কেউ শোধ করতে পারবে না।

যাঁর চিন্তা চেতনায় সবার আগে এসেছে দেশ, দেশের মানুষ, দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটানো, পেট ভরে ভাত খেতে পাবে, দুর্নীতিমুক্ত সমাজে বাস করবে, দেশের মানুষ শিক্ষা দীক্ষায় উন্নত হবে। বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো একটা দেশ উপহার দিতে চেয়েছে, সেই লক্ষ্যে কাজ করছিলেন তিনি, একটা যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশেকে উনি সাড়ে তিন বছরে সোজা করে দাঁড় করিয়েছিলেন। কিন্ত সে হাসি হাসতে পারেন নি। কারণ ৭১’এর দোসররা রয়ে গিয়েছে আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে, সমাজে, সরকারে। আর তারাই নির্দ্বিধায় খুন করে দেশের একমাত্র বন্ধুকে, বঙ্গবন্ধুকে।

➤মুজিব বর্ষ কি?

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ১৭ মার্চ ২০২০ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে ২০২০ খ্রিস্টাব্দের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ খ্রিস্টাব্দের ২৬ মার্চ পর্যন্ত ২০২০-২০২১ খ্রিস্টাব্দকে মুজিব বর্ষ হিসাবে জাতীয়ভাবে পালনের ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের রূপকার, কিংবদন্তি এই নেতা ১৭ মার্চ ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার ছোট্ট একটি গ্রাম টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ২৬ মার্চ ২০২১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করবে। জাতিসংঘের অন্যতম একটি অঙ্গ সংগঠন ইউনেস্কো। মুজিব বর্ষ উদযাপনের জন্য ইউনেস্কোর ৪০তম সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের সাথে যৌথভাবে মুজিব বর্ষ পালন করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তাছাড়া ২০১৯ সালের১২ নভেম্বর থেকে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর অধিবেশনে ইউনেস্কোর সকল সদস্যের উপস্থিতিতে ২৫ নভেম্বর মুজিব বর্ষ পালনের সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। শেখ মুজিব ও বাংলাদেশ – এরা একে অপরের পরিপূরক অর্থাৎ, একটিকে বাদ দিয়ে আরেকটিকে চিন্তা করা যায় না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও স্বাধীনতা, শেখ মুজিব, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব বর্ষ – এসবই একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই মুজিব বর্ষ উদযাপন এত তাৎপর্যপূর্ণ।

সৈয়দ শামসুল হক নূরলদীনের সারাজীবন কাব্যনাটকে যেন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের কথাই লিখে রেখেছেন:
‘দেখিবার অপেক্ষায় আছোঁ,
নবান্নের পিঠার সুঘ্রাণে দ্যাশ ভরি উঠিতেছে।
দেখিবার অপেক্ষায় আছোঁ,
হামার গাভীন গাই অবিরাম দুধ ঢালিতেছে।
দেখিবার অপেক্ষায় আছোঁ,
মানুষ নির্ভয় হাতে আঙিনায় ঘর তুলিতেছে।
দেখিবার অপেক্ষায় আছোঁ,
নিশীথে কোমল স্বপ্ন মানুষের চোখে নামিতেছে।…
সুখে দুঃখে অন্নপানে সকলেই একসাথে আছে
সোনার বাংলার সোনা বাংলাদেশে আছে।’

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ১৭ মার্চ ২০২০ থেকে
১৭ মার্চ ২০২১, অর্থাৎ জাতির পিতার এক জন্মদিন থেকে আরেক জন্মদিন পর্যন্ত বছরটি উদযাপিত হবে মুজিব বর্ষ হিসেবে। সে হিসাবে ক্ষণগণনার দিনক্ষণ থেকে মুজিব বর্ষ শুরু হতে বাকি ছিল ৬৮ দিনের কিছু বেশি।আগামী ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী।১৭ মার্চ বর্ণাঢ্য উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে জাঁকজমকপূর্ণভাবে শুরু হবে বছরব্যাপী এ অনুষ্ঠান মালা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যদি ঘাতকের নিষ্ঠুর বুলেটে প্রাণ না হারাতেন তবে আজ ১৬ ফেব্রুয়ারী তাঁর বয়স হতো ৯৯ বছর ১১মাস ১দিন এবং ২০২০ সালের ১৭ মার্চ তিনি শতায়ু হতেন। আবার কাকতালীয়ভাবে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ তারিখে বাংলাদেশ তাঁর স্বাধীনতার অর্ধ-শত বার্ষিকীতে পদার্পণ করবে।

কি আশ্চর্য এক মিলের সেতু বন্ধন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর তাঁর স্বপ্নের গড়ে ওঠা বাংলাদেশের। কিন্তু হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ এই বাঙালিকে জাতি হিসেবে আমরা মাত্র ৫৫ বছর ৪ মাস বাঁচতে দিয়েছি। স্বাভাবিক মৃত্যু হলে শতায়ু তিনি হতেন না, তা কে বলতে পারে! যদি তিনি তাঁর অতি প্রিয় বাংলার মাটিতে শতবর্ষ বেঁচে থাকতেন তবে এই দিনটি জাতি তখন কীভাবে পালন করত, তা ভাবলে মনেপ্রাণে শিহরণ জাগে।

সেই উপলব্ধি থেকেই হয়তো বাংলাদেশের বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার সে দেশের স্বপ্নদ্রষ্টা প্রিয় নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে ২০২০-২০২১ খ্রীস্টাব্দকে মুজিব বর্ষ হিসেবে পালনের ঘোষণা দিয়েছে। এই হলো পটভূমি। যে দেশটির জন্য তিনি আমৃত্যু সংগ্রাম করেছেন, যে দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নের কথা নিয়েই যিনি জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত উৎসর্গ করেছিলেন, তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ঘোষিত “মুজিব বর্ষ”টি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান উদযাপনে দুটি কমিটি গঠন করেছে সরকার। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ১০২ সদস্যবিশিষ্ট ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটি’। এ কমিটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্যদিকে জাতীয় অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামকে সভাপতি ও কবি কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীকে প্রধান সমন্বয়কারী করে গঠন করা হয়েছে ৬১ সদস্যবিশিষ্ট ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি’।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বিগত ৮ জানুয়ারি, ২০২০ সালে ’৭৫ পরবর্তী সময়ে চতুর্থবারের মতো সরকারপ্রধান হিসেবে শপথ নেয়ার এক বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে বলেছেন, “২০২০ সাল আমাদের জাতীয় জীবনে এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বছর। এ বছর উদযাপিত হতে যাচ্ছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই উদযাপন শুধু আনুষ্ঠানিকতা-সর্বস্ব নয়, এই উদযাপনের লক্ষ্য জাতির জীবনে নতুন জীবনীশক্তি সঞ্চারিত করা; স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে জাতিকে নতুন মন্ত্রে দীক্ষিত করে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পথে আরও একধাপ এগিয়ে যাওয়া।”

আগামী ১৭ই মার্চ বর্ণাঢ্য উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে মুজিববর্ষের বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালার সূচনা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের অনুষ্ঠানমালা যুগপৎভাবে চলতে থাকবে।মুজিববর্ষ’ উদযাপনে বছরব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বিশ্বের ১৯৫টি দেশে অনুষ্ঠানমালা আয়োজনের পাশাপাশি ঢাকার আয়োজনে যোগ দিতে আসবেন বিশ্বনেতারা।

➤মুজিব বর্ষের ক্ষণগণনা:

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষণগণনার উদ্বোধন ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিন ১০ জানুয়ারি থেকে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে লন্ডনে যান বঙ্গবন্ধু। সেখান থেকে ভারতে স্বল্প সময়ের যাত্রাবিরতি দিয়ে ১০ জানুয়ারি দুপুরে তিনি তৎকালীন তেজগাঁও বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। সেই ঐতিহাসিক ঘটনাকে আরো স্মরণীয় করতে ১০ জানুয়ারি থেকেই মুজিব বর্ষের ক্ষণ গণনা শুরু হয়।
জয় বাংলা- এ শ্লোগান আমাদের স্বাধীনতার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাইতো গত ১০ ডিসেম্বর, ২০১৯ জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা দেন মহামান্য হাইকোর্ট। আর এই স্লোগান যাঁর মুখে মুখরিত ছিলো সে আমাদের সকলের শ্রদ্ধেয়সংগ্রামী বাঙালীর প্রিয় নেতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।এই দিনটিতে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে বিশ্বস্বীকৃত সেই মহামানব হানাদার শত্রুদের দুর্ভেদ্য লৌহপ্রকোষ্ঠ ছিন্নভিন্ন করে হিমালয়ের মতো শির উঁচু করে তাঁর স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশের পবিত্র মাটিতে অশ্রুসজল নয়নে সহাস্য বদনে বিমান থেকে কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে অবতরণ করেছিলেন। নয় মাস পর তিনি এলেন, সমবেত লাখো মানুষের হৃদয় উদ্বেলিত করে খোলা ট্রাকে করে রেসকোর্স ময়দানে তাঁরই জন্য তৈরি মঞ্চে যাওয়ার পথে নয়নভরা জলে রাস্তার ধারের হাজারো জনতার চোঁখেও জল বইয়ে দিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার নায়ক, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টাকে সাড়ে সাত কোটি বাঙালি বরণ করে নিল জাতির পিতা হিসেবে। ১০ জানুয়ারিতে (১৯৭২) আপন মানুষদের সাহচর্যে এসে রেসকোর্স ময়দানে ভাষণ দিতে গিয়ে নিজে আবারও কাঁদলেন আর কাঁদালেন লাখো জনতাকে। আজ ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তিনি জীবিত থাকলে দেখতেন তাঁর সেই প্রাণপ্রিয় সাড়ে সাত কোটি বাঙালির পূর্বসূরিরা বেড়ে হয়েছে সংখ্যায় ১৭ কোটি। আর ১৭ কোটি বাঙালির ৩৪ কোটি হাত আজ ঊর্ধ্বে উঠিয়ে আনন্দের ফানুস উড়িয়ে দুহাতে করতালি দিয়ে আরেকবার আবেগঘণ হৃদয়ে মনের কোঠরে গেঁথে নিয়েছেন জাতির পিতাকে; যাঁর অপরিসীম আত্মত্যাগের ফল হিসেবে আমরা পেয়েছি স্বাধীন একটি দেশ, একটি পতাকা আর একটি নতুন মানচিত্র। আমাদের সার্বভৌমত্বের প্রতীক সবুজের মাঝে উদীয়মান তরুণ সূর্য। তাঁরই সম্মানে সবাই পালন করবে তাঁর শততম জন্মশতবার্ষিকী একটি দিনে নয়, সারা বছর ধরে প্রতিদিন, যা পরিচিতি পাবে ‘মুজিববর্ষ’ হিসেবে। মুজিববর্ষ নাম হয়েছে তাঁরই নামানুসারে, যাঁর নামটি ঠাঁই করে নিয়েছে বাংলার ইতিহাসে, ইতিহাসের পাতায় প্রোথিত হওয়া যে নাম ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’-এর গায়ে খোদিত হয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে সুনীল আকাশে।তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সবার প্রিয় ‘শেখ মুজিব’।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষণগণনার উদ্বোধন করার সঙ্গে সঙ্গে দেশের ৫৩ জেলা, ২টি উপজেলা, ১২টি সিটি কর্পোরেশনের ২৮টি পয়েন্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর ৮৩টি পয়েন্টে বসানো কাউন্টডাউন ঘড়ি চালু হয়।

➤এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশ। ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্ম শত বার্ষিকী আমরা উদযাপন করবো। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তি। আমরা ২০২০ থেকে ২০২১ সালকে ‘মুজিব বর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছি। আমরা এই সময়টাকে এমন ভাবে কাজে লাগাতে চাই- বাংলাদেশ যেনো ক্ষুধা মুক্ত, দারিদ্র মুক্ত সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে ওঠে।’

সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে মুজিব বর্ষ উদ্‌যাপনের নানা পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে, বেশ একটা কর্মযজ্ঞ চলছে। বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম থেকে শিক্ষা নিয়ে তা যদি জীবনে কাজে লাগানো যায়, তা হবে বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা ও স্মরণ করার শ্রেষ্ঠ উপায়। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘এই স্বাধীন দেশে মানুষ যখন পেট ভরে খেতে পাবে, পাবে মর্যাদাপূর্ণ জীবন; তখনই শুধু এই লাখো শহীদের আত্মা তৃপ্তি পাবে।’

বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। আমাদের কর্তব্য হবে তাকে অর্থবহ করে তোলা। সে জন্য কী করতে হবে, তা–ও তিনি বলে গেছেন, ‘যিনি যেখানে রয়েছেন, তিনি সেখানে আপন কর্তব্য পালন করলে দেশের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে না।’ (১৫ জানুয়ারি ১৯৭৫)
২০২০ সালের অঙ্গীকার হোক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা, যা মূর্ত আছে আমাদের ১৯৭২-এর সংবিধানের মৌল চার নীতিতে—গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতায়।

যদি বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম থেকে শিক্ষা নিয়ে তা আমাদের জীবনে কাজে লাগাতে পারি, তা হবে বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা ও স্মরণ করার শ্রেষ্ঠ উপায়।বঙ্গবন্ধু সাধারণ রাজনৈতিক কর্মী থেকে ইতিহাসের মহানায়কে পরিণত হওয়ার কোনো পর্যায়েই তাঁর সব শক্তির উৎস গণমানুষের সান্নিধ্য থেকে দূরে সরেনি। জনতা ও নেতার এই রসায়ন ও এই বন্ধন কেবল মুখে প্রকাশ করার বিষয় নয়, এটি জীবনযাপনের অঙ্গীভূত বিষয়।
বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘এই স্বাধীন দেশে মানুষ যখন পেট ভরে খেতে পাবে, পাবে মর্যাদাপূর্ণ জীবন; তখনই শুধু এই লাখো শহীদের আত্মা তৃপ্তি পাবে।’ এই কথাটা কিন্তু গভীরভাবে ভাবার মতো। প্রতিটি নাগরিকের মর্যাদা নিশ্চিত করা খুব জরুরি। এই কথাটার মানে কি আমরা বুঝি? রবীন্দ্রনাথেরই কথা যে, ‘হে মোর দুর্ভাগা দেশ, যাদের করেছ অপমান, অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান!’ মানুষকে যেন আমরা অপমান না করি।
বঙ্গবন্ধু মুজিব সারাটা জীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন। শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন। দুখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছেন। ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলেছেন। তাঁর প্রকাশিত বই দুটি অসমাপ্ত আত্মজীবনী আর
কারাগারের রোজনামচা আমাদের অবশ্যপাঠ্য। শুধু পড়লেই চলবে না, তাঁর কথাগুলো আমাদের মেনে চলতে হবে। বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ‘বিরোধী দল ছাড়া গণতন্ত্র হয় না।’ বঙ্গবন্ধু কারাগারের রোজনামচা য় লিখেছেন, ‘সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বলতে তো কিছুই নাই। এখন ব্যক্তিগত সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত করা শুরু করেছে। পাকিস্তানকে শাসকগোষ্ঠী কোন পথে নিয়ে চলেছে, ভাবতেও ভয় হয়। আজ দলমত-নির্বিশেষে সকলের এই জঘন্য অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো উচিত।’ (৩০ জুন ১৯৬৬) ১৯৭২ সালের ৯ মে রাজশাহীতে এক ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন,
‘আমি কী চাই?
আমি চাই আমার বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত খাক। আমি কী চাই?
আমার বাংলার বেকার কাজ পাক।
আমি কী চাই?
আমার বাংলার মানুষ সুখী হোক।
আমি কী চাই?
আমার বাংলার মানুষ হেসেখেলে বেড়াক।
আমি কী চাই?
আমার সোনার বাংলার মানুষ আবার প্রাণ ভরে হাসুক।’

নারীর প্রতি আস্থা ও সম্মান বিষয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছেন, “আমার জীবনেও আমি দেখেছি যে গুলির সামনে আমি এগিয়ে গেলেও কোনো দিন আমার স্ত্রী আমাকে বাধা দেয় নাই। এমনও আমি দেখেছি যে, অনেকবার আমার জীবনের ১০/১১ বছর আমি জেল খেটেছি। জীবনে কোনো দিন মুখ খুলে আমার ওপর প্রতিবাদ করে নাই। তাহলে বোধ হয় জীবনে অনেক বাধা আমার আসত। এমন সময়ও আমি দেখেছি যে আমি যখন জেলে চলে গেছি, আমি এক আনা পয়সা দিয়ে যেতে পারি নাই আমার ছেলেমেয়ের কাছে। আমার সংগ্রামে তার দান যথেষ্ট রয়েছে। পুরুষের নাম ইতিহাসে লেখা হয়। মহিলার নাম বেশি ইতিহাসে লেখা হয় না। সে জন্য আজকে আপনাদের কাছে কিছু ব্যক্তিগত কথা বললাম। যাতে পুরুষ ভাইরা আমার, যখন কোনো রকমের সংগ্রাম করে নেতা হন বা দেশের কর্ণধার হন তাদের মনে রাখা উচিত, তাদের মহিলাদেরও যথেষ্ট দান রয়েছে এবং তাদের স্থান তাদের দিতে হবে”।

ছাত্রলীগ ও ছাত্রদের প্রতি তিনি বলেন, “ছাত্র ভাইয়েরা, লেখাপড়া করেন। আপনাদের লজ্জা না হলেও আমার মাঝে মাঝে লজ্জা হয় যখন নকলের কথা আমি শুনি। ডিগ্রি নিয়ে লাভ হবে না। ডিগ্রি নিয়ে মানুষ হওয়া যায় না। ডিগ্রি নিয়ে নিজের আত্মাকে ধোঁকা দেওয়া যায়। মানুষ হতে হলে লেখাপড়া করতে হবে। আমি খবর পাই বাপ-মা নকল নিয়া ছেলেদের-মেয়েদের এগিয়ে দিয়ে আসে। কত বড় জাতি। উঁহু! জাতি কত নিচু হয়ে গেছে।”

বাংলাদেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনের পর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত জনসভায় দেওয়া ভাষণে বলেন, “রাস্তা নেই ঘাট নেই, রেলওয়ে ব্রিজ এখন পর্যন্ত সারতে পারি নাই। চরিত্র এত জঘন্য খারাপ হয়ে গেছে যেই ধরি পকেটমাইর ধরি, চোর-গুন্ডা ধরি, লজ্জায় মরে যাই ছাত্রলীগের ছেলে, ভাই-বোনেরা। পুলিশ দিয়া নকল বন্ধ করতে হয় আমার এ কথা কার কাছে কবো মিয়া? এ দুঃখ! বলার জায়গা আছে মিয়া? তোমরা নকল বন্ধ করো। ছাত্রলীগ ছাত্র ইউনিয়ন নিয়া সংগ্রাম পরিষদ করেছ, তোমরা গার্ড দিয়া নকল বন্ধ করো। তোমাদের আমি সাহায্য করি। পুলিশ দিয়া আমাদের নকল বন্ধ করতে দিয়ো না তোমরা। পুলিশ দিয়ে আমি চোর সামলাব”।

১৯৭৩ সালের ১৯ আগস্ট, ঢাকায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলনে দেওয়া ভাষণ দান কালে তিনি বলেন, আমি দেখতে চাই যে, ছাত্রলীগের ছেলেরা যেন ফার্স্টক্লাস বেশি পায়। আমি দেখতে চাই, ছাত্রলীগের ছেলেরা যেন ওই যে কী কয়, নকল, ওই পরীক্ষা না দিয়া পাস করা, এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলো।

বঙ্গবন্ধুর নীতি, আদর্শের ছিতে ফোঁটা যদি দলের সব নেতা-কর্মী পালন করে তাহলে দেশে যে উন্নয়ন চলছে তা হবে টেকসই, মজবুত ও দীর্ঘমেয়াদী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অনুরোধ দলের আদর্শবান সৎ নেতাকর্মীদের চিহ্নিত করে তাদের সঠিক মর্যাদাদান ও সুযোগ সন্ধানী, হাইব্রিড, ন্যায়-নীতি বর্জিত কর্মীদের শাস্তি প্রদান করুন।

বঙ্গবন্ধুর পরিকল্পনা, আদর্শ, ন্যায়-নীতি, জীবন, চিন্তা, শিক্ষা ও কর্ম থেকে শিক্ষা নিয়ে যদি সরকার পরিচালিত হয় এবং তার যথাযথ পালন হয় তা হলেই মুজিব বর্ষ সফল হবে বলে দৃশ্যত। আর সেই লক্ষ্যে যদি অটুট থাকা যায় তাহলে বাংলাদেশ অচিরের একটা সোনার দেশ হয়ে গড়ে উঠবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।

আমার ব্যক্তিগত অভিমত যে, বঙ্গবন্ধু যা করতে চেয়েছিলেন, যেভাবে চেয়ে ছিলেন দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য, সেইসব পদক্ষেপ নিয়ে বাস্তবায়ন করলে তাঁকে সঠিক শ্রদ্ধা জানানো হবে। তাঁর জীবন ও কর্মের থেকে ছিটেফোঁটা শিক্ষা নিলেও দেশের মানুষের জীবন উন্নত হতে পারে। উনাকে চর্মচোঁখে না দেখলেও, পরিবারের কাছ থেকে যতটুকু শুনেছি, ইতিহাস পাঠে যতটুকু জেনেছি বা তার লেখা অসমাপ্ত আত্মজীবনী আর কারাগারের রোজনামচা পড়ে যতটুকু জেনেছি, তা আমার যাপিত জীবনে যদি অনুসরন করতে পারি তা হবে উনাকে সম্মান, শ্রদ্ধা ও স্মরণ করার সমান ।

বাংলাদেশ নামক এই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পেছনে যিনি মূল কারিগর ও স্বাধীনতা অর্জনের পর ’৭৫ সালে ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে বিশ্ব ইতিহাসের কলংকময় সেই রাতে শহীদ হওয়ার আগে পর্যন্ত স্বাধীন বাংলাদেশের পরতে পরতে যে সকল সমস্যা ও গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো তিনি তাঁর বক্তৃতায় ও তাঁর লেখা বই এ তুলে এনেছেন যার অধিকাংশ থেকে আমরা আজো মুক্তি পাইনি।আসুন দৃষ্টভঙ্গি বদলাই,বদলে যাবে সমাজ,বদলে যাবে দেশ।নিজেরা সংশোধিত হয়ে তাঁর দেখানো পথে চলি। মুজিব বর্ষ কে সাফল্য মন্ডিত করি।

মুজিব মানে বিশ্ব নেতা
মুজিব মানে স্বাধীনতা
মুজিব মানে জাতির পিতা
ঝরুক মুজিব বর্ষের বার্তা।

 

মুজিব কোটের রহস্যের ইতিহাস: এস এম শাহনূর

| ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ১১:২৭ অপরাহ্ণ

মুজিব কোটের রহস্যের ইতিহাস: এস এম শাহনূর

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানেই বাংলাদেশ। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর কাছে যা যা প্রিয় ছিল তাই দেশের সকল মানুষের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছে। বঙ্গবন্ধুর বিশেষ পোশাক ছিলো সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা আর ৬ বোতামের কালো কোট। যে কোটটি পরবর্তীতে ‘মুজিব কোট’ নামে বেশি পরিচিতি পায়। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং তাকে যারা ভালোবাসতেন তারাই পরবর্তিতে এই ‘মুজিব কোট’ ব্যবহার করতেন।
বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের মাঝেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই ‘মুজিব কোট’। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে যারা রাজনীতি করছেন তারাও এই কোটকে ব্যবহার করছেন। বঙ্গবন্ধুর ভক্তদের কাছে, এই কোট ধারণ করা মানেই বঙ্গবন্ধুকে ধারণ করার সামিল। পায়জামা-পাঞ্জাবির সাথে মুজিব কোট ছাড়াও মোটা ফ্রেমের চশমা, চুরুটের পাইপও বঙ্গবন্ধুর আইকন হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
বঙ্গবন্ধু ঠিক কত সাল থেকে কালো কোট পরা শুরু করেছিলেন তার কোনো নির্দ্রিষ্ট সময়সীমা পাওয়া যায়নি। তবে মাওলানা ভাসানী এবং শামসুল হক যখন আওয়ামী মুসলীম লীগ করলেন তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মোস্তাক আহমেদ সংগঠনটির যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। ধারণা করা হয়, তখন থেকেই বঙ্গবন্ধুকে এই কোট পড়তে বেশি দেখা যায়। তবে এই কোটটির প্রচলন ‘নেহেরু কোট’ থেকে।
ভারত উপমহাদেশ স্বাধীনের সময় জওহরলাল নেহেরুর (স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী) বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে এই নেহেরু কোটের প্রচলন শুরু হয়। পরে সেখান থেকেই বঙ্গবন্ধু এই কোটটি পড়তেন বলেই এর নাম দেয়া হয় ‘মুজিব কোট’। বঙ্গবন্ধুর স্বভাবতই তার পছন্দের সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবির মতই কোটটি ব্যবহার করতেন।
তবে আগরতলা(১৯৬৮) মামলার সময় থেকেই বঙ্গবন্ধু এই কালো কোট পড়া শুরু করেন বলে জানান বিশিষ্ট সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেন।
এই মুজিব কোটে ছিলো ৬টি বোতাম। মুজিব কোটের ৬ বোতাম মানেই শেখ মুজিবের ৬ দফা। স্বধীনতা ঘোষণার পূর্বে শেখ মুজিবের গায়ের কোটটি মুজিব কোট হিসেবে তেমন খ্যাতি লাভ করেনি। কালো হাতাকাটা এই বিখ্যাত কোটটি তখনও লাভ করেনি কালজয়ী কোনো নাম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এক ছাত্র তার সহপাঠী তাজউদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে দেখা দিতে গিয়েছিলেন। তিনি শেখ মুজিবুর রহমানকে অনেক কাছ থেকে দেখলেন, কথাও বললেন দীর্ঘক্ষণ। কথা শেষে ওঠে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু যখন তার কালো কোটটি গায়ে জড়াচ্ছিলেন তখন ওই ছাত্র লক্ষ্য করলেন কোটে ৬টি বোতাম রয়েছে। যা এ ধরনের অন্য কোটের বোতামের চেয়ে কম। এসময় তিনি বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার কোটের বোতাম ৬টি কেন? উত্তরে বঙ্গবন্ধু তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘এমন প্রশ্ন এর আগে আমাকে আর কেউ করেনি। তুই প্রথম। এই ৬টি বোতাম আমার ঘোষিত ৬ দফার প্রতীক।’ আর এ কারণেই একটি আদর্শ মুজিব কোটের প্রতিটিতে বোতামের সংখ্যা থাকে ৬টি।
ইতিহাস থেকে দেখলে, মুজিব কোটের সঙ্গে জওহরলাল নেহেরুর ব্যবহৃত জ্যাকেট এবং মুজিব টুপির সঙ্গে সুভাষ বসুর আজাদ-হিন্দ ফৌজের টুপির বেশ মিল রয়েছে। তখন এসব জ্যাকেট-টুপি বৃটিশবিরোধী সংগ্রামে ভারতীয় কংগ্রেস অনুসৃত ভারতীয় জাতীয়তার স্মারকচিহ্ন হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। সেগুলোই সামান্য পরিবর্তিত চেহারায় বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে নতুনভাবে জেগে উঠতে শুরু করেছে। যার বিশেষত রুপ হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘মুজিব কোট’ বাংলাদেশে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

 

ভ্যালেন্টাইন্স ডে: ভালোবাসা ভাল নয়- এস এম শাহনূর

| ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ৩:৪৬ অপরাহ্ণ

ভ্যালেন্টাইন্স ডে: ভালোবাসা ভাল নয়- এস এম শাহনূর

নিশ্চয় আল্লাহর নিকট শ্রেষ্ঠ আমল হলো আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কাউকে ভালবাসা এবং শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কারো সাথে শত্রুতা রাখা।’’ [আহমদ, মুসনাদুল আনসার, হাদিস নং২০৩৪১]

ভালোবাসা পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর কোমল দুরন্ত মানবিক অনুভূতি। ভালোবাসা নিয়ে ছড়িয়ে আছে কত কত পৌরাণিক উপাখ্যান। সাহিত্য-শিল্প-সংস্কৃতি সর্বত্রই পাওয়া যায় ভালোবাসার সন্ধান। ভালোবাসার জন্য মানুষ মৃত্যুকে তুচ্ছ করে। রাজা সিংহাসন ত্যাগ করে হাসিমুখে প্রেমিকার হাত ধরে। আজকের এই পাথর সময়ে ঈর্ষা-বিদ্বেষ আর হানাহানির পৃথিবীতে ভালোবাসা প্রতিনিয়ত সৃষ্টি করে চলেছে অমর্ত্যলোকের কাহিনী। কিন্তু প্রত্যেক মু’মিনের ভালোবাসার একমাত্র প্রধান কেন্দ্র হলো মহান আল্লাহ এবং তাঁর প্রিয় রাসূল (সা.)। পিতা-মাতা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, ইত্যাদি সকলের প্রতি ভালোবাসার মূল ভিত্তি হবে আল্লাহ ও রাসূলের ভালোবাসার পরিপূর্ণতার জন্য।
১৪ ফেব্রুয়ারি, ভ্যালেন্টাইনস ডে বা ভালোবাসা দিবস। আজকাল অনেক মুসলিমই প্রকৃত বিষয়টি না জেনে নানা রকম বিজাতীয় সংস্কৃতির চর্চা করে থাকে। কী এই ভ্যালেন্টাইনস ডে? কীভাবে তার উৎপত্তি? কেনইবা একে ঘিরে ভালোবাসা উৎসবের আহ্বান? আসুন তরুণ বন্ধু, প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজি।

সেন্ট ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ (Saint Valentine’s Day) এর প্রথম শব্দটিই এ দিনটির আসল পরিচয়ের জানান দিতে যথেষ্ট। Advanced Oxford Learners’ Dictionary তে Saint শব্দের অর্থ লেখা হয়েছে- A Person Declared to be holy by the christian church because of her/his Qualities or good works. অর্থাৎ এমন ব্যক্তি, খ্রিস্টান গীর্জা কর্তৃক যাকে তার গুণাবলী বা ভালো কাজের জন্য পবিত্র সত্তা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। Valentine অর্থ ভালোবাসা নয় বরং এক ব্যক্তির নাম। সুতরাং সহজেই বুঝা যায়, গীর্জা কর্তৃক ‘পবিত্র সত্তা’ হিসেবে ঘোষিত হওয়া একজন ধর্মযাজকের প্রতি সম্মান প্রদর্শন-ই এ দিনটি উদযাপনের মূল উদ্দেশ্য।

ভ্যালেন্টাইনস ডে বা বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের উৎপত্তি নিয়ে আছে নানা মুনির নানা মত।

‘ভালবাসা দিবস’কে কেন্দ্র করে সারা পৃথিবী দিন দিন উন্মাতাল হয়ে উঠছে। পশ্চিমা দেশগুলোর পাশাপাশি প্রাচ্যের দেশগুলোতেও এখন ঐ সংস্কৃতির মাতাল ঢেউ লেগেছে। এমনকি ৯৫ ভাগ মুসলমানের এ প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশেও উচ্ছৃংখল মুসলিম ছেলে-মেয়ে, বুড়ো-বুড়িরাও এ অশ্লীল স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়ে থাকে। হৈ চৈ, উন্মাদনা, রাঙায় মোড়া ঝলমলে উপহার সামগ্রী, নামি রেস্তোরাঁয় ‘ক্যান্ডেল লাইট ডিনার’কে ঘিরে প্রেমিক যুগলের চোখেমুখে এখন বিরাট উত্তেজনা।

আমাদের দেশে দিনটির শুরু : ১৯৯৩ সালের দিকে আমাদের দেশে ভালোবাসা দিবসের আবির্ভাব ঘটে।
ইতিহাসে ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ : ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’র ইতিহাস প্রাচীন। এর উৎস হচ্ছে ১৭শ’ বছর আগের পৌত্তলিক রোমকদের মাঝে প্রচলিত ‘আধ্যাত্মিক ভালোবাসা’র উৎসব। এ পৌত্তলিক উৎসবের সাথে কিছু কল্পকাহিনী জড়িত ছিল, যা পরবর্তীতে রোমীয় খৃস্টানদের মাঝেও প্রচলিত হয়। এ সমস্ত কল্প-কাহিনীর অন্যতম হচ্ছে, এ দিনে পৌত্তলিক (অগ্নি উপাসক) রোমের পৌরাণিক কাহিনীতে বর্ণিত রোমিউলাস নামক জনৈক ব্যক্তি একদা নেকড়ের দুধ পান করায় অসীম শক্তি ও জ্ঞানের অধিকারী হয়ে প্রাচীন রোমের প্রতিষ্ঠা করেন। রোমানরা এ পৌরাণিক কাহিনীকে কেন্দ্র করে ১৪ ফেব্রুয়ারি উৎসব পালন করত।
ক্যাথলিক বিশ্বকোষে ভ্যালেনটাইন ডে সম্পর্কে তিনটি ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। কিন্তু বিভিন্ন বইয়ে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনা উদ্ধৃত হয়েছে। তন্মধ্যে প্রসিদ্ধ কয়েকটি ঘটনা নিম্নরূপ :

➤১ম বর্ণনা : রোমের সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস-এর আমলের ধর্মযাজক সেন্ট ভ্যালেনটাইন ছিলেন শিশুপ্রেমিক, সামাজিক ও সদালাপী এবং খৃস্টধর্ম প্রচারক। আর রোম সম্রাট ছিলেন দেব-দেবীর পূজায় বিশ্বাসী। সম্রাটের তরফ থেকে তাকে দেব-দেবীর পূজা করতে বলা হ’লে ভ্যালেন্টাইন তা অস্বীকার করেন। ফলে তাকে কারারুদ্ধ করা হয়। রোম স¤্রাটের বারবার খৃস্টধর্ম ত্যাগের আহবান প্রত্যাখ্যান করলে ২৭০ খৃস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রীয় আদেশ লঙ্ঘনের অভিযোগে সম্রাট ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন। The St. Valentine who inspired the holiday may have been two different men.Officially recognized by the Roman Catholic Church, St. Valentine is known to be a real person who died around A.D. 270. However, his true identity was questioned as early as A.D. 496 by Pope Gelasius I, who referred to the martyr and his acts as æbeing known only to God.”

➤২য় বর্ণনা : খৃস্টীয় ইতিহাস অনুযায়ী এ দিবসের সূত্রপাত হয় ২৬৯ খৃস্টাব্দে। সাম্রাজ্যবাদী, রক্তলোলুপ রোমান সম্রাট ক্লডিয়াসের দরকার ছিল এক বিশাল সৈন্যবাহিনীর। এক সময় তার সেনাবাহিনীতে সেনা সংকট দেখা দেয়।
কিন্তু কেউ তার সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে রাজী নয়। সম্রাট লক্ষ্য করলেন যে, অবিবাহিত যুবকরা যুদ্ধের কঠিন মুহূর্তে অত্যধিক ধৈর্যশীল। ফলে তিনি যুবকদের বিবাহ কিংবা যুগলবন্দী হওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করেন। যাতে তারা সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে অনীহা প্রকাশ না করে। তার এ ঘোষণায় দেশের তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতীরা ক্ষেপে যায়। সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামের এক ধর্মযাজকও সম্রাটের এ নিষেধাজ্ঞা মেনে নিতে পারেননি। প্রথমে তিনি ভালবেসে সেন্ট মারিয়াসকে বিয়ের মাধ্যমে রাজার আদেশকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং তার গীর্জায় গোপনে বিয়ে পড়ানোর কাজ চালাতে থাকেন। একটি রুমে বর-বধূ বসিয়ে মোমবাতির স্বল্প আলোয় ভ্যালেন্টাইন ফিস ফিস করে বিয়ের মন্ত্র পড়াতেন। কিন্তু এ বিষয়টি এক সময়ে সম্রাট ক্লডিয়াস জেনে যান। তিনি সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। ২৭০ খৃস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি সৈন্যরা ভ্যালেন্টাইনকে হাত-পা বেঁধে টেনে-হিঁচড়ে সম্রাটের সামনে হাজির করলে তিনি তাকে হত্যার আদেশ দেন। ঐ দিনের শোক গাঁথায় আজকের ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’।

অন্য  একটি বর্ণনা  মতে, সেন্ট ভ্যালেন্টাইন কারারুদ্ধ হওয়ার পর প্রেমাসক্ত যুবক-যুবতীদের অনেকেই প্রতিদিন তাকে কারাগারে দেখতে আসত এবং ফুল উপহার দিত। তারা বিভিন্ন উদ্দীপনামূলক কথা বলে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে উদ্দীপ্ত রাখত। জনৈক কারারক্ষীর এক অন্ধ মেয়েও ভ্যালেন্টাইনকে দেখতে যেত। অনেকক্ষণ ধরে তারা দু’জন প্রাণ খুলে কথা বলত। এক সময় ভ্যালেন্টাইন তার প্রেমে পড়ে যায়। সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের আধ্যাত্মিক চিকিৎসায় অন্ধ মেয়েটি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পায়। ভ্যালেন্টাইনেরভালোবাসা ও তার প্রতি দেশের যুবক-যুবতীদেরভালোবাসার কথা সম্রাটের কানে যায়। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে মৃত্যুদণ্ড দেন। তাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছিল ২৬৯ খৃস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি।

➤৩য় বর্ণনা : গোটা ইউরোপে যখন খৃস্টান ধর্মের জয়জয়কার, তখনও ঘটা করে পালিত হ’ত রোমীয় একটি রীতি। মধ্য ফেব্রুয়ারিতে গ্রামের সকল যুবকরা সমস্ত মেয়েদের নাম চিরকুটে লিখে একটি জারে বা বাক্সে জমা করত। অতঃপর ঐ বাক্স হ’তে প্রত্যেক যুবক একটি করে চিরকুট তুলত, যার হাতে যে মেয়ের নাম উঠত, সে পূর্ণবৎসর ঐ মেয়ের প্রেমে মগ্ন থাকত। আর তাকে চিঠি লিখত, এ বলে ‘প্রতিমা মাতার নামে তোমার প্রতি এ পত্র প্রেরণ করছি।’ বৎসর শেষে এ সম্পর্ক নবায়ন বা পরিবর্তন করা হ’ত। এ রীতিটি কতক পাদ্রীর গোচরীভূত হ’লে তারা একে সমূলে উৎপাটন করা অসম্ভব ভেবে শুধু নাম পাল্টে দিয়ে একে খৃস্টান ধর্মায়ন করে দেয় এবং ঘোষণা করে এখন থেকে এ পত্রগুলো ‘সেন্ট ভ্যালেনটাইন’-এর নামে প্রেরণ করতে হবে। কারণ এটা খৃস্টান নিদর্শন, যাতে এটা কালক্রমে খৃস্টান ধর্মের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যায়।

➤৪র্থ বর্ণনা : প্রাচীন রোমে দেবতাদের রাণী জুনো (Juno)’র সম্মানে ১৪ ফেব্রুয়ারি ছুটি পালন করা হ’ত। রোমানরা বিশ্বাস করত যে, জুনোর ইশারা-ইঙ্গিত ছাড়া কোন বিয়ে সফল হয় না। ছুটির পরদিন ১৫ ফেব্রুয়ারি লুপারকালিয়া ভোজ উৎসবে হাজারো তরুণের মেলায় র‌্যাফেল ড্র’র মাধ্যমে সঙ্গী বাছাই প্রক্রিয়া চলত। এ উৎসবে উপস্থিত তরুণীরা তাদের নামাংকিত কাগজের স্লিপ জনসম্মুখে রাখা একটি বড় পাত্রে (জারে) ফেলত। সেখান থেকে যুবকের তোলা স্লিপের তরুণীকে কাছে ডেকে নিত। কখনও এ জুটি সারা বছরের জন্য স্থায়ী হ’ত এবং ভালোবাসার সিঁড়ি বেয়ে বিয়েতে পরিণতি ঘটত।

➤৫ম বর্ণনা : রোমানদের বিশ্বাসে ব্যবসা, সাহিত্য, পরিকল্পনা ও দস্যুদের প্রভু ‘আতারিত’ এবং রোমানদের সবচেয়ে বড় প্রভু ‘জুয়াইবেতার’ সম্পর্কে ভ্যালেনটাইনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। সে উত্তরে বলে, এগুলো সব মানব রচিত প্রভু, প্রকৃত প্রভু হচ্ছে, ‘ঈসা মসীহ’। এ কারণে তাকে ১৪ ফেব্রুয়ারিতে হত্যা করা হয়।

➤৬ষ্ঠ বর্ণনা : কথিত আছে যে, খৃস্টধর্মের প্রথম দিকে রোমের কোন এক গীর্জার ভ্যালেন্টাইন নামক দু’জন সেন্ট (পাদ্রী)-এর মস্তক কর্তন করা হয় নৈতিক চরিত্র বিনষ্টের অপরাধে। তাদের মস্তক কর্তনের তারিখ ছিল ১৪ ফেব্রুয়ারি। ভক্তেরা তাদের ‘শহীদ’ (!) আখ্যা দেয়। রোমান ইতিহাসে শহীদের তালিকায় এ দু’জন সেন্টের নাম রয়েছে। একজনকে রোমে এবং অন্যজনকে রোম থেকে ৬০ মাইল (প্রায় ৯৭ কি.মি.) দূরবর্তী ইন্টারামনায় (বর্তমান নাম Terni) ‘শহীদ’ করা হয়। ইতিহাসবিদ কর্তৃক এ ঘটনা স্বীকৃত না হ’লেও দাবী করা হয় যে, ২৬৯ খৃস্টাব্দে ‘ক্লাউডিয়াস দ্যা গথ’-এর আমলে নির্যাতনে তাদের মৃত্যু ঘটে। ৩৫০ খৃস্টাব্দে রোমে তাদের সম্মানে এক রাজপ্রাসাদ (Basilica) নির্মাণ করা হয়। ভূগর্ভস্থ সমাধিতে একজনের মৃতদেহ আছে বলে অনেকের ধারণা।
অন্য এক তথ্যে জানা যায়, রোমে শহীদ ইন্টারামনা গীর্জার বিশপকে ইন্টারামনা ও রোমে একই দিনে স্মরণ করা হয়ে থাকে। রোমান সম্রাট ২য় ক্লাউডিয়াস ২০০ খৃস্টাব্দে ফরমান জারী করেন যে, তরুণরা বিয়ে করতে পারবে না। কারণ অবিবাহিত তরুণরাই দক্ষ সৈনিক হ’তে পারে এবং দেশের জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে পারে। ভ্যালেন্টাইন নামের এক তরুণ সম্রাটের আইন অমান্য করে গোপনে বিয়ে করে। কেউ কেউ বলেন, রাজকুমার এ আইন লংঘন করেন।

➤৭ম বর্ণনা : প্রাচীনকালে রোমানরা নেকড়ে বাঘের উপদ্রব থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে লুপারকালিয়া নামে ভোজানুষ্ঠান করত প্রতি বছর ১৫ ফেব্রুয়ারি। এ ভোজানুষ্ঠানের দিন তরুণরা গরুর চামড়া দিয়ে একে অন্যকে আঘাত করত। মেয়েরাও উৎসবে মেতে উঠত। ভ্যালেন্টাইন নামের কোন বিশিষ্ট বিশপ প্রথমে এর উদ্বোধন করেন। সেই থেকে এর নাম হয়েছে ভ্যালেন্টাইন, তা থেকে দিবস। রোমানরা ৪৩ খৃস্টাব্দে ব্রিটেন জয় করে। এ কারণে ব্রিটিশরা অনেক রোমান অনুষ্ঠান গ্রহণ করে নেয়। অনেক গবেষক এবং ঐতিহাসিক Lupercalia অনুষ্ঠানের সঙ্গে ভ্যালেন্টাইন অনুষ্ঠানের একটা যোগসূত্র আছে বলে মনে করেন। কেননা এতে তারিখের অভিন্নতা ও দু’টি অনুষ্ঠানের মধ্যে চরিত্রগত সাদৃশ্য রয়েছে।
কালক্রমে এটি সমগ্র ইউরোপে এবং ইউরোপ থেকে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। ‘Be my valentine’ (আমার ভ্যালেন্টাইন হও)।
১৮শ’ শতাব্দী থেকেই শুরু হয়েছে ছাপানো কার্ড প্রেরণ। এ সব কার্ডে ভাল-মন্দ কথা, ভয়-ভীতি আর হতাশার কথাও থাকত। ১৮শ’ শতাব্দীর মধ্য ভাগ থেকে উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে যে সব কার্ড ভ্যালেন্টাইন ডে’তে বিনিময় হ’ত তাতে অপমানজনক কবিতাও থাকত।
সবচেয়ে যে জঘন্য কাজ এ দিনে করা হয়, তা হ’ল ১৪ ফেব্রুয়ারি মিলনাকাক্সক্ষী অসংখ্য যুগল সবচেয়ে বেশী সময় চুম্বনাবদ্ধ হয়ে থাকার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়া। আবার কোথাও কোথাও চুম্বনাবদ্ধ হয়ে ৫ মিনিট অতিবাহিত করে ঐ দিনের অন্যান্য প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করে।

ভালোবাসা দিবসের পরিণতি ‘ধর ছাড়’ আর ‘ছাড় ধর’ নতুন নতুন সঙ্গী। তাদের এ ধরা-ছাড়ার বেলেল্লাপনা চলতে থাকে জীবনব্যাপী। বছর ঘুরে ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনটি আমাদের ভালোবাসায় রাঙিয়ে গেলেও, ভালোবাসা কিন্তু প্রতিদিনের। খ্রিস্টান পাদ্রী (ধর্ম যাজক) সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের কুকর্ম স্মরণ রাখার জন্য কোনো ঈমানদারের পক্ষে ভ্যালেন্টাইন ডে পালন করা কি উচিত হবে?

“ভালোবাসা একদিনের নয়
নিত্য দিনই ভালোবাসা হয়।
ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে
ভালোবাসা ভাল নয়।
কপোত কপোতির পেখম মেলা
তোমাকে আমার বড্ড অবহেলা।”

 

ভ্যালেন্টাইন ডে এর নামে তরুণ-তরুণীদের সস্তা যৌন আবেগকে সুড়সুড়ি দিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা ও ফাসাদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। অথচ আল্লাহ তা‘আলা ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের ভালবাসেন না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

‘‘আর তারা তো পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করে বেড়ায়। আর আল্লাহ ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের ভালবাসেন না।’’ [সূরা আল মায়িদাহ: ৬৪]
আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ‘‘যারা মু’মিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে তাদের জন্য আছে দুনিয়া ও আখিরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি..।’’ [সূরা আন-নূর :১৯]

 

ইংরেজি নববর্ষের ইতিহাস: এস এম শাহনূর

| ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ | ৮:৪৬ অপরাহ্ণ

ইংরেজি নববর্ষের ইতিহাস: এস এম শাহনূর

কিভাবে পেলাম এ ইংরেজি নববর্ষ? কি তার ইতিহাস? কখন থেকে শুরু হল এ নববর্ষ উৎযাপন? তাকি আমরা জানি? পৃথিবীর শুরু থেকেই ছিল নাকি পরবর্তীতে শুরু হয়েছে? আসুন! জানা অজানা কিছু বিষয় জেনে নেই। জেনে নেয়া যাক বর্ণিল উৎসাহে পালন করা ইংরেজি নববষের্র ইতিহাস। আমরা যে ইংরেজি সন বা খ্রীস্টাব্দ বলি আসলে এটা হচ্ছে গ্রেগরীয়ান ক্যালেন্ডার। এটা একটি সৌর সন। নানা পরিবর্তন, পরিমার্জন, পরিবর্ধন, বিবর্তন এবং যোগ-বিয়োজনের মধ্য দিয়ে বর্ষ গণনায় বর্তমান কাঠামো লাভ করে।

গ্রেট ব্রিটেনে এই গ্রেগরীয়ান ক্যালেন্ডার প্রচলিত হয় ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে। এই ক্যালেন্ডার আমাদের দেশে নিয়ে আসে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে। গ্রেগরীয়ান ক্যালেন্ডারের আগে নাম ছিল জুলিয়ান ক্যালেন্ডার। খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ অব্দে রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার মিসর দেশে প্রচলিত ক্যালেন্ডারটি রোমে এনে তার কিছুটা সংস্কার করে তাঁর রোম সাম্রাজ্যে চালু করেন। এই ক্যালেন্ডারে জুলিয়াস সিজারের নামে জুলাই মাসের নামকরণ করা হয়। মিসরীয়রা বর্ষ গণনা করত ৩৬৫ দিনে। মিসরীয়দের ক্যালেন্ডার সংস্কার করে জুলিয়াস সিজার যে ক্যালেন্ডার রোমে প্রবর্তন করলেন তাতে বছর হলো ৩শ’ সাড়ে পঁয়ষট্টি দিনে। এখানে উল্লেখ্য যে, মিসরীয় ক্যালেন্ডার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলেছেন এই ক্যালেন্ডারের প্রবর্তন করা হয় খ্রিস্টপূর্ব ৪২৩৬ অব্দে।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, মানুষ সূর্য দেখে সময় হিসেব করতো। কিংবা বলা যায় তারও আগে মানুষ বুঝতই না সময় আসলে কী। ধারণাটা আসে চাঁদের হিসাব থেকে। অর্থাৎ চাঁদ ওঠা এবং ডুবে যাওয়ার হিসাব করে মাস এবং তারপর বছরের হিসাব করা হতো। চাঁদ ওঠার সময় বলা হতো ক্যালেন্ডস, পুরো চাঁদকে বলতো ইডেস, চাঁদের মাঝামাঝি অবস্থাকে বলতো নুনেস। সূযের্র হিসাবে বা সৌর গণনার হিসেব আসে অনেক পরে। সৌর গণনায় ঋতুর সঙ্গে সম্পর্ক থাকে, কিন্তু চন্দ্র গণনায় ঋতুর সঙ্গে সম্পর্ক থাকে না। প্রাচীন মেসোপটেমিয়ায় যে সভ্যতা গড়ে উঠেছিলো, তাকে বলা হয় মেসোপটেমীয় সভ্যতা। বর্তমানের ইরাককে প্রাচীনকালে বলা হতো মেসোপটেমিয়া। এই মেসোপটেমিয়ান সভ্যতার ৪টা আলাদা আলাদা ভাগ আছে আর তা হচ্ছে সুমেরীয় সভ্যতা, ব্যাবিলনিয় সভ্যতা, আসিরিয় সভ্যতা ও ক্যালডিয় সভ্যতা। এদের মধ্যে বর্ষ গণনা শুরু হয় ব্যাবিলনিয় সভ্যতায়।

কিন্তু তখন বর্তমানের মতো জানুয়ারির ১ তারিখে নতুন বর্ষ গণনা শুরু হতো না। তখন নিউ ইয়ার পালন করা হতো যখনই বসন্তের আগমন হতো। অর্থাৎ শীতকালের রুক্ষতা ঝেড়ে প্রকৃতি যখন গাছে গাছে নতুন করে পাতা গজাতে থাকে, ফুলের কলিরা ফুটতে শুরু করে তখনই নতুন বর্ষ! অন্যান্য দেশেরমতই আমাদের দেশেও প্রাথমিক বর্ষ পঞ্জিকায় অল্প পরিসরে সুমের/সুমেয়ী সভ্যতায় পরিলক্ষিত হয়। তবে মিশরীয় সভ্যতাই পৃথিবীর প্রাচীনতম সৌর ক্যালেন্ডার চালু করে বলে জানা যায়। খ্রিস্টপূর্ব ১৫৩ সালের ১ জানুয়ারি নতুন বছর পালনের সিদ্ধান্ত নেয় রোমান সিনেট। আর বছরের প্রথম মাস জানুয়ারির নামকরণ করা হয় রোমানদের দেবতা জানুসের নামে। লাতিন শব্দ জানুস, অর্থ দরজা। এই দড়জা মানেই ইংরেজি নতুন বছরের আগমন,ইংরেজি নতুন বছরের শুরু। জানা যায়, প্রথম মিশরীয়রা সূর্য দেখে বছর হিসাব করতে শুরু করে। যাকে তারা সৌরবর্ষ নাম দিল।

কিন্তু সমস্যা হলো সূর্য দেখে হিসাব আর চন্দ্র দেখে হিসাবের অনেক পার্থক্য থাকতো। কিন্তু বছর গুনলে কী হবে তার হিসাব রাখা জরুরি। তাই সুমেরীয়রা বর্ষপঞ্জিকা আবিষ্কার করলো। যাকে ক্যালেন্ডার বলি। ইংরেজি নববর্ষ শুরুর ইতিহাস : গ্রিকদের কাছ থেকে বর্ষপঞ্জিকা পেয়েছিল রোমানরা। তারা কিন্তু ১২ মাসে বছর গুণতো না। তারা বছর গুনতো ১০ মাসে । মধ্য শীত মৌসুমের ৬০ দিন তারা বর্ষ গণনায় আনতো না। রোমানদের বর্ষ গণনার প্রথম মাস ছিল মার্চ। তখন ১ মার্চ পালিত হতো নববর্ষ উৎসব। শীত মৌসুমে ৬০ দিন বর্ষ গণনায় না আনার কারণে বর্ষ গণনা যে দুটি মাসের ঘাটতি থাকতো তা পূরণ করবার জন্য তাদের অনির্দিষ্ট দিন-মাসের দ্বারস্থ হতে হতো।

এই সব নানা জটিলতার কারণে জনসাধারণের মধ্যে তখন ক্যালে-ার ব্যবহার করবার প্রবণতা একেবারেই ছিল না বলে জানা যায়। রোম উপাখ্যান খ্যাত প্রথম সম্রাট রমুলাসই আনুমানিক ৭৩৮ খ্রীস্টপূর্বাব্দে রোমান ক্যালেন্ডার চালু করার চেষ্টা করেন। পরবর্তীকালে রোমান সম্রাট নূমা পন্টিলাস ১০ মাসের সঙ্গে আরো দুটো মাস যুক্ত করেন। সে দুটো মাস হচ্ছে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি। রোমানরা বছর হিসাব করতো ৩শ’চার দিনে। তিনি ‘মারসিডানাস’ নামে আরও একটি মাস যুক্ত করেন রোমান বর্ষপঞ্জিকায়। তখন থেকে রোমানরা ১ জানুয়ারি নববর্ষ পালন করতে শুরু করে। ১ জানুয়ারি নববর্ষ পালন শুরু হয় সম্রাট জুলিয়াস সিজারের সময় থেকে। খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ অব্দে সম্রাট জুলিয়াস সিজার একটি নতুন বর্ষপঞ্জিকার প্রচলন করে।

রোমানদের আগের বর্ষপঞ্জিকা ছিল চন্দ্রবষের্র, সম্রাট জুলিয়াসেরটা হলো সৌরবষের। খ্রিস্টপূর্ব ১৫৩ সালের ১ জানুয়ারি নতুন বছর পালনের সিদ্ধান্ত নেয় রোমান সিনেট। আর বছরের প্রথম মাস জানুয়ারির নামকরণ করা হয় রোমানদের দেবতা জানুসের নামে। লাতিন শব্দ জানুস, অর্থ দরজা। এই দড়জা মানেই ইংরেজী নতুন বছরের আগমন,ইংরেজী নতুন বছরের শুরু। তার নামের সঙ্গে মিলিয়ে জানুয়ারি মাসের নাম হওয়ায় জুলিয়াস ভাবলেন নতুন বছরের ফটক হওয়া উচিত জানুয়ারি মাস।

সেজন্য জানুয়ারির ১ তারিখে নববর্ষ পালন শুরু হলো। আর পরে জুলিয়াস সিজারের নামানুসারে প্রাচীন কুইন্টিলিস মাসের নাম পাল্টে রাখা হয় জুলাই। আরেক বিখ্যাত রোমান সম্রাট অগাস্টাসের নামানুসারে সেক্সটিনিস মাসের নাম হয় অগাস্ট। যিশুখ্রিস্টের জন্ম বছর থেকে গণনা করে ডাইওনিসিয়াম এক্সিগুয়াস নামক এক খ্রিস্টান পাদ্রি ৫৩২ অব্দ থেকে সূচনা করেন খ্রিস্টাব্দের। ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দের কথা। রোমের পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি জ্যোতির্বিদদের পরামর্শ নিয়ে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার সংশোধন করেন। এরপর ওই সালেই অর্থাৎ ১৫৮২ তে গ্রেগোরিয়ান ক্যালেন্ডারে ১ জানুয়ারিকে আবার নতুন বছরের প্রথম দিন বানানো হয়।

পরিশেষে আমার শিক্ষা জীবনের পিঠস্থান কাইতলা যঁজ্ঞেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক মেধাবী মুখ সুপ্রিয় অগ্রজ সঞ্জয় সাহার ফেইস বুক টাইম লাইনে লেখা একটি স্ট্যাটাস দিয়ে আজকের লেখাটি শেষ করতে চাই।তিনি লিখেছেন, বিদায় ক্ষণে দাঁড়িয়ে “২০১৯”। সকলে ব্যস্ত নতুন বছর ২০২০ কে স্বাগত জানাতে। এটাই সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রচলিত ধারা। একটা কথা আছে অতীতের দীর্ঘশ্বাস ও ভবিষ্যতের আশ্বাস কোনটাই বাস্তব জীবনে কাজে আসে না। তবু অতীতের পাওয়া না পাওয়ার কারণগুলো বর্তমানে নির্দেশনা হিসেবে কাজে লাগে প্রত্যেকের জীবনে। ২০১৯ এ আমি কি হারিয়েছি তার জন্যে আক্ষেপ করে যেতে চাই না। যা পেয়েছি তাকে মনে প্রাণে ধারন করে ২০২০ সাল কে বরণ করতে চাই। মানতে চাই ২০১৯ আমাকে যা দিয়েছে সেটাকে সূচনা করে ২০২০ আমাকে আরো অনেক ভাল কিছু দিবে যা পূর্বে আমি পাইনি। সবাইকে নতুন বছরের প্রীতি ও শুভেচ্ছা। ভাল থেকো ভালো রেখ ” ২০২০”।

 

চারগাছ রণাঙ্গনের ৩ শহীদের সমাধি জমশেরপুর: এস এম শাহনূর

| ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯ | ১:২৩ অপরাহ্ণ

চারগাছ রণাঙ্গনের ৩ শহীদের সমাধি জমশেরপুর: এস এম শাহনূর

মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি
মোরা একটি মুখের হাসির জন্য অস্ত্র ধরি।
যে মাটির চির মমতা আমার অঙ্গে মাখা
যার নদী জল ফুলে ফুলে মোর স্বপ্ন আঁকা
যে নদীর নীল অম্বরে মোর মেলছে পাখা
সারাটি জনম যে মাটির ঘ্রাণে অস্ত্র ধরি।
(গোবিন্দ হালদার)

আমাদের পাশের গ্রামে কিংবা আমাদের বাড়ির পাশে, কারো কারোর ঘরের পাশে, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক আবু, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আবু জাহিদ আবু ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সাইফুল ইসলাম সাফু চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। ক’জনা তাঁদের খবর রেখেছি।কতটুকুই বা জানি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে  বাঙালি জাতির জন্য  আত্ম উৎসর্গকারী এ শ্রেষ্ঠ শহীদদের সম্পর্কে।

কুমিল্লার গৌরব তিন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা যথাক্রমে মোজাম্মেল হক আবু, আবু জাহিদ আবু ও সাইফুল ইসলাম সাফু।এই তিন শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের রণাঙ্গন ও মৃত্যুস্থল ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের চারগাছ বাজারের সন্নিকট এবং তাঁদের শেষ আশ্রয় স্থল বা কবর একই উপজেলার বাদৈর ইউনিয়নের জমশেরপুরে। দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকার পর শহীদ মোজাম্মেল হক আবুর পরিবারের মাধ্যমে কবরগুলো পাকারণ ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা গৃহীত হয়।

দীর্ঘদিন ধরে এ তিন শহীদদের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে কিছু লেখার ইচ্ছা মনে মনে পোষণ করে চলেছি। আমার বাড়ি উপজেলার মেহারী ইউনিয়নের বল্লভপুর গ্রামে হলেও তাঁদের কবরগুলো জিয়ারত করার সৌভাগ্য এখনো হয়ে উঠেনি।আমার বড় বোনের শ্বশুর বাড়ি পদুয়া গ্রামে।তাই খুবই ছোট্টবেলা এবং কৈশোরে জমশেরপুর ও পদুয়া গ্রামের অধিকাংশ বনবাদাড় ও মেঠোপথে ঘুরে বেড়িয়েছি।ছোট্টকাল থেকে কবিতা ও গল্প লেখায় হাতেখড়ি হলেও সেই বয়সে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কিছু লিখব এমন চিন্তা কখনো মাথায় আসেনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আঞ্চলিক ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও গবেষণা করতে গিয়ে  বছর দুয়েক আগে আলোচ্য বিষয়ের  সকল প্রকার তথ্য ও লেখাগুলো আমার সংগ্রহে আসে।কিছুদিন ধরে ভাবছিলাম সময় করে একদিন শহীনগণের কবর তিনটি জিয়ারত করে আসবো।অতঃপর কবরের নামফলকের ছবি দিয়ে আমার লেখাটি প্রকাশ করবো।দুর্ভাগ্য তারও সময় হয়ে উঠেনি।লেখালেখির সুবাদে পরিচয় হল প্রবীন লেখক,কবি ও প্রাবন্ধিক শামীম পারভেজ সাহেবের সাথে।তিনি বাংলাদেশের একজন গুণীজন।তিনি জমশেরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম আব্দুর রউফ সাহেবের নাতি ও গ্রামের কৃতি সন্তান। তিনি সহ এলাকার সুধীজন গতকাল ১৬ই ডিসেম্বর সকালবেলা তিন শহীদের সমাধি বেদীতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানের প্রতি শ্রদ্ধা ও দোয়া করেন।ধন্যবাদ আপনাদের সকলকে।

উল্লেখিত তিন মুক্তিযোদ্ধার রণাঙ্গনের সাথী ছিলেন কিশোর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল্লাহ-হিল-বাকী।চারগাছের যুদ্ধে তিনিও আহত হয়েছিলেন । সেই যুদ্ধের স্মৃতি কোনোদিনই ভুলতে পারেননি তিনি। চারগাছের যুদ্ধে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল্লাহ-হিল-বাকী হারিয়েছেন তার সহযোদ্ধা অপর দুই কিশোর সহযোদ্ধা_ আবু জাহিদ আবু ও সাইফুল ইসলাম সাফুকে। অগ্রজপ্রতিম মোজাম্মেল হক আবুও শহীদ হন সেই যুদ্ধে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় কুমিল্লা জিলা স্কুলে দশম শ্রেণীতে পড়তেন আবদুল্লাহ-হিল-বাকী। যুদ্ধ শুরুর আগে শুরু হয়েছিল তার যুদ্ধ_ ‘পাকিস্তান দেশ ও কৃষ্টি’ নামের বই পাঠ্যতালিকা থেকে বাতিলের আন্দোলনের মধ্যদিয়ে। যার মূলে ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনা। এরপর একাত্তরের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম… যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে।’ তখন তিনিও প্রস্তুত হয়ে গেলেন। প্রস্তুতিপর্বে নেতৃত্ব দিলেন কুমিল্লা শহরের অগ্রজপ্রতিম ছাত্রলীগ নেতারা। বিশেষ করে ছাত্রলীগ নেতা নাজমুল হাসান পাখীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ধাপে ধাপে মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার কাজটি সেরে নিলেন তিনি। তাদের দায়িত্ব দেওয়া হলো_ কসবা, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, মুরাদনগরের অংশবিশেষে দায়িত্ব পালন করার জন্য। সেই অনুযায়ী তারা যুদ্ধ করলেন বিভিন্ন জায়গায়। কিন্তু চারাগাছের যুদ্ধ নিয়ে এসেছিল তাদের জন্য চরম পরাজয়ের গ্লানি।
আবদুল্লাহ-হিল-বাকী বলেন, সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহেই জানতে পারেন তাদের যেতে হবে মুরাদনগর এলাকায়। তাদের কমান্ডার ছিলেন নাজমুল হাসান পাখী। সেপ্টেম্বরের ১১ তারিখ তাদের বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা ছিল। অনিবার্য কারণে দেরি হয়ে যায়। পরে রওনা হলেন ১২ তারিখে। রওনা হওয়ার পর আবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দক্ষিণে উজানিসার ব্রিজ পর্যন্ত আসতে দেরি হয়ে যায় তাদের। একপর্যায়ে গভীর রাতে নৌকায় রওনা হন জামসেদপুরের দিকে। রাজাকারদের উৎকোচ দিয়ে ব্রিজের নিচ দিয়ে বেরিয়ে আসতে তেমন কোনো অসুবিধা হয় না।
খালের পাড়ঘেঁষে নৌকা চলতে থাকে পশ্চিমে চারগাছের দিকে। নিশ্চিন্ত তখন নৌকার অন্যরাও। কারণ একটু আগেই চলে গেছে ঢাকার মোস্তফা মহসীন মন্টুদের একটি নৌকা। কোনো গুলির শব্দ হয়নি। তার

Some text

ক্যাটাগরি: সাহিত্য

[sharethis-inline-buttons]

আমি প্রবাসী অ্যাপস দিয়ে ভ্যাকসিন…

লঞ্চে যৌন হয়রানি