বৃহস্পতিবার রাত ৩:৫৩, ২৮শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ১১ই ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং

গ্রামে আমার ঘুমিয়ে আছে হৃৎপিণ্ড

জাহাঙ্গীর আলম বিপ্লব

তিতাস নদীর পাড়ঘেঁষা আমার এ গ্রামটি যেন নদী তীরবর্তী পটে আঁকা ছবির মতো। গ্রাম আমাকে সতেজতায় ভরে দেয়। দেহ-মনে ফিরিয়ে দেয় উদ্যম আর প্রাণচঞ্চলতা।

গ্রামে আমার ঘুমিয়ে আছে হৃৎপিণ্ড, আর তার স্পন্দন ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বময়। তিতাস নদীর পাড় ঘেঁষে সেই আমার গ্রাম। অপার সৌন্দর্যমাখা আমার গ্রামখানির প্রাকৃতিক দৃশ্য অবলোকন করে যে কেউ বিমুগ্ধ চিত্তে তাকিয়ে থাকবে। নয়নাভিরাম সতেজ প্রকৃতি, এখনো গ্রামে গেলেই হয়ে যাই ভবঘুরে ও বাউন্ডুলে স্বভাবের। সারাদিন কাটে তরুছায়ায় পাখির ডাক শুনে। কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে যাই অন্য জগতে। মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াই।

গ্রাম-বাংলার প্রকৃতির এই চিরাচরিত রূপে মুগ্ধ হয়ে কিছু সময়ের জন্য নির্বাক হয়ে যাই। ভারি আনন্দ হয়, বেলা শেষে যখন বাড়ি ফিরি। শিকড়ে ফিরে আসার আনন্দ সব আনন্দকে ছাড়িয়ে যায়। আমার রক্তের সম্পর্কের আত্মার মানুষগুলোর চাঁদের হাট সেখানেই। নদীর তীরে আর রেল লাইনের পাশে ঘাসফুল থেকে শুরু করে গ্রামে রয়েছে নানা চেনা-অচেনা বন্য ফুল। এসব ফুলের আলিঙ্গনে আমার গ্রাম হয়েছে সুন্দর।

এই গ্রামের মানুষদের নদীর মাছ দিয়ে ভাত খেয়ে দিন শুরু হতো। তিতাস তার নাব্যতা হারিয়েছে বহুকাল আগেই। তাই আজ সেই নদীতে আগের মতো আর মাছ পাওয়া যায় না। ছোটবেলায় শিমরাইলকান্দির মাজার ঘাটে এসে বসতাম, আর নদীতে পাল তোলা নৌকা গুণে সময় কাটাতাম। এই নদীর কল্যাণেই গ্রামটা যথেষ্ট সমৃদ্ধশালী।

অসাধারণ সেই অনুভূতি! মেঠো পথে নুয়ে পড়া সেই বাঁশঝাড়ের নিচে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। বাঁশের পাতা বাতাসে আমার শরীরে আদরের মতো করে যেন হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। এই দৃশ্য দেখেছি বাস্তবে, অনুভব করেছি একসময় আমার গ্রামে।

কিছু দিন আগেও সন্ধ্যার পর শ্মশান ঘাট থেকে ভেসে আসত শেয়ালের ডাক। রাতের অন্ধকারে জোনাকি পোকার মিটিমিটি জ্বলা আলো। দেখলে মনে হতো, মহাকাশের নক্ষত্রপুঞ্জ বুঝি এই পৃথিবীর বুকে নেমে এসেছে। রাতের অন্ধকারে তাদের মিটমিটিয়ে জ্বলা আলো দেখে দেহ-মন স্নিগ্ধ হয়। পরিবেশের ভারসাম্যহীনতা, ক্রমবর্ধমান মানুষের চাপ প্রভৃতি কারণে কমে যাচ্ছে বন-জঙ্গল। এতে করে কমে যাচ্ছে জোনাকি পোকার আশ্রয়স্থান।

অসাধারণ সেই অনুভূতি! মেঠো পথে নুয়ে পড়া সেই বাঁশঝাড়ের নিচে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। বাঁশের পাতা বাতাসে আমার শরীরে আদরের মতো করে যেন হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। এই দৃশ্য দেখেছি বাস্তবে, অনুভব করেছি একসময় আমার গ্রামে। এখনো কবরে ছায়া দেওয়া কাঠবাদাম গাছটির পাতায় ঝিরঝিরে বাতাসে মিষ্টি একটা আওয়াজ শোনা যায়। নদীর ওপাশের ধানের শীষগুলো যেন বাতাসের সাথে লুকোচুরি খেলে।

নদীর পানিতে চাঁদের আলো পড়ে ঝিকমিক করছে। আমি যদি আমার গ্রাম সম্পর্কে বিষদভাবে বর্ণনা না পারি, যদি গ্রামের মনকাড়া দৃশ্যগুলো ছবির মতো করে তুলে ধরতে না পারি, তাহলে আমি তৃপ্তি পাই না।

তিতাস নদীর পাড়ঘেঁষা আমার এ গ্রামটি যেন নদী তীরবর্তী পটে আঁকা ছবির মতো। গ্রাম আমাকে সতেজতায় ভরে দেয়। দেহ-মনে ফিরিয়ে দেয় উদ্যম আর প্রাণচঞ্চলতা। এবং গ্রাম আমাকে মুক্তি দেয় খাচাবন্দী পাখি হয়ে যাওয়া থেকে। গাঁয়েই আমার সবকিছু।

জাহাঙ্গীর আলম বিপ্লব : সাংবাদিক, কলামিস্ট

ক্যাটাগরি: মিনি কলাম

ট্যাগ:

[sharethis-inline-buttons]

One response to “গ্রামে আমার ঘুমিয়ে আছে হৃৎপিণ্ড”

  1. সাইয়েদ ইকরাম শাফী says:

    সুন্দর লেখা।

Leave a Reply