![](https://www.old.deshdorshon.com/wp-content/uploads/2020/07/IMG_20200711_072728-750x420.jpg)
এখনকার সময়ে ভ্রমণ মানেই তথাকথিত ‘প্রাকৃতিক সৌন্দর্য’ উপভোগ করা। তাদের কথিত কৃষ্টি-চিন্তার দ্বারা ভ্রমণকৃত স্থানের মানুষের জীবনমান পর্যবেক্ষণ ও পরিমাপ করা। এর আলোকে শ্রেণি বিভাজন করা। তাদের জীবন ও কৃষ্টির পরিবর্তন সাধনে সচেষ্ট হওয়া। ধার করা সভ্যতার আলোকেও সে স্থানটিকে গড়ে তোলার প্রবণতা বিদ্যমান থাকে। অথচ আমরা ভুলে যাই, সব সমাজেরই নিজস্ব একটা চিন্তা-চেতনা ও ধ্যান-ধারণা থাকে, যা ভাঙ্গতে গেলে তাদের নিজস্বতা ভেঙ্গে তাদেরকে হুমকির মুখে ফেলার সমতুল্য। তাদের প্রকৃত জ্ঞানের বিকাশ সাধনের পরিবর্তন না করে শুধু অবকাঠামোগত দিকটি পরিলক্ষিত হলে তাতে অবকাঠামোর পরিবর্তন সাধন হলেও জীবনমানের কোনো পরিবর্তন হয় না। যা আজকের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলো আমাদের জন্য উৎকৃষ্ট বাস্তবতা।
চিন্তা ও গবেষণার অংশ হিসেবে ছোট্ট একটি ভ্রমণ। মাঝে মাঝে ছোট ভ্রমণগুলো চিন্তা ও জ্ঞান বিকাশে সহায়ক হয় তখনই, যখন এর উদ্দেশ্য হয়- মত বিনিময়ের দ্বারা নিজেকে গড়ে তোলা। মাটি ও মাটির সঙ্গে মিশে থাকা মানুষগুলোর জীবনধারা, গতিবিধি, চিন্তা-চেতনার সঙ্গে বই পড়ে যতটা পরিচিত হওয়া যায়, তারচেয়ে বাস্তবে পর্যবেক্ষণ করাটা অনেক কার্যকর হয়।
প্রায় এক বছর হলো ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছেড়ে ঢাকায় গিয়েছি। করোনা পরিস্থিতির কারণে কিছুদিন হলো নবীনগর আসছি। দেশ দর্শন সম্পাদক জাকির মাহদিন ভাই বললেন, “ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসুন, দুজনে কিছু সময় কাটাই, ঘুরি, কথা বলি।” অনেক গড়িমসি করে দু’দিন আগে নবীনগর থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাই জাকির মাহদিন ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। তার সাথে অনেক আগে থেকেই পরিকল্পনা করছিলাম, বিষ্ণুপুরের রূপায় উনার বড় খালাম্মার বাড়িতে যাওয়ার। কিন্তু যাওয়ার সুযোগ হচ্ছিল না। হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিয়ে বিকেল প্রায় সাড়ে পাঁচটায় দু’জন ‘রূপার’ উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেই।
![](http://www.deshdorshon.com/wp-content/uploads/2020/07/IMG_20200711_125616-scaled.jpg)
জাকির মাহদিন ও আমি, উনার খালুর কাঁঠাল বাগানে
প্রকৃতির সবুজ মায়ায় ঘেরা বিজয়নগর থানার রূপা-মহেশপুর গ্রামগুলো। যাতায়াত ব্যবস্থা ভাল হলেও ভাঙ্গাচূড়া রাস্তার কারণে যেতে সময় লাগে বেশি। শারীরিকভাবেও কষ্ট করতে হয়। তবে তথ্য প্রযুক্তি এবং ভোগবাদের ছোঁয়া তারাও ভোগ করছে। প্রতিটি ঘরে রয়েছে প্রবাসি। যার প্রভাবে হারাতে বসেছে তাদের সঙ্গে মিশে থাকা লাল মাটির ঘরগুলো। তার জায়গা দখল করেছে ইট-বালু-সিমেন্ট-রডের তৈরি পাঁকা ঘর। আগে যেখানে স্থানীয় লোকেরা নিজেরাই বিভিন্ন ফলের বাগান করত বর্তমানে সদর থানার লোকদের কাছে জমি বন্ধক দিয়ে দিচ্ছে। গ্রামকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ার কারণে তারাও শহরমুখী হয়ে পড়ছে। অথচ কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিকে সরকার কাজে লাগাতে পারলে স্থানীয় জনগণকে ভিন্ন চিন্তা করতে হতো না।
![](http://www.deshdorshon.com/wp-content/uploads/2020/07/IMG_20200711_073501-scaled.jpg)
মহেশপুর উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে
শুধু তাই নয়! এখানে স্কুল কলেজ থাকা সত্ত্বেও শিক্ষার মান তেমন একটা উন্নত নয়। খুব অল্প বয়সেই ছেলেরা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে না হয় বিদেশে পাঠানো হয়। অপরদিকে মেয়েদের একটু শিক্ষিত হলেই তাদের শহরে বড় ঘরে বিয়ে দেবার স্বপ্ন বুনে বাবা-মারা। আর হবেই না কেন তারাও কী আর সচেতন? তারাও যে নিজের চিন্তা-জ্ঞানকে লালিত করছে অন্যের চিন্তা দর্শন দ্বারা। কথিত শিক্ষা আজও তাদের নিজস্ব জগতটাকে গড়ে দিতে পারে নি। তারাও এক রকম সীমার মধ্যেই আবদ্ধ হয়ে আছে। বিশ্বের বড় বড় চিন্তক, জ্ঞানী, গুণীজনরাও প্রকৃতির ছোঁয়ায় নিজেকে অনন্য করেছেন। অথচ আধুনিক এ সমাজের মানুষগুলো তা অনুধাবন করতে অক্ষম।
![](http://www.deshdorshon.com/wp-content/uploads/2020/07/IMG_20200711_112740-scaled.jpg)
রূপা বাজারে, ঢাকা-সিলেট রেললাইন সংলগ্ন
চিন্তা ও গবেষণার অংশ হিসেবে ছোট্ট একটি ভ্রমণ। মাঝে মাঝে ছোট ভ্রমণগুলো চিন্তা ও জ্ঞান বিকাশে সহায়ক হয় তখনই, যখন এর উদ্দেশ্য হয়- মত বিনিময়ের দ্বারা নিজেকে গড়ে তোলা। মাটি ও মাটির সঙ্গে মিশে থাকা মানুষগুলোর জীবনধারা, গতিবিধি, চিন্তা-চেতনার সঙ্গে বই পড়ে যতটা পরিচিত হওয়া যায়, তারচেয়ে বাস্তবে পর্যবেক্ষণ করাটা অনেক কার্যকর হয়। পারস্পরিক সম্পর্ক ও আন্তরিকতা বৃদ্ধি পায়। রূপার অপরূপ সৌন্দর্যে আমি বিমোহিত। প্রকৃতি ও মানুষের মাঝে রয়েছে গভীর বন্ধন। যা প্রকৃতির কাছে না গেলে অনুধাবন করা যায় না। অবশেষে ২৪ ঘণ্টার সংক্ষিপ্ত ভ্রমণ শেষ করে সদরে পথে পা বাড়ালাম।
শরীফ উদ্দীন রনি: বার্তা সম্পাদক, দেশ দর্শন
Some text
ক্যাটাগরি: প্রকৃতি ও পরিবেশ, ভ্রমণ কাহিনি, সাহিত্য
[sharethis-inline-buttons]