![](https://www.old.deshdorshon.com/wp-content/uploads/2019/09/IMG_20190924_152820-720x420.jpg)
🇧🇩 পূর্ববঙ্গ, পূর্ববাংলা হতে কি বাংলাদেশ?
একসময় এই উপমহাদেশ ভারতবর্ষ নামেই পরিচিত ছিল। এই ভারতবর্ষে নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ ও পাকিস্তান আছে। আছে বাংলাদেশ নামক এক সোনার দেশ।
১৯৩২ সালে ভারতবর্ষের পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিমের পাঁচটি মুসলমানপ্রধান প্রদেশ ও রাজ্য পাঞ্জাব, উত্তরপশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ বা আফগান প্রদেশ, কাশ্মীর, সিন্ধু ও বেলুচিস্তানের নামের অংশ একত্র করে ইংল্যান্ডের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র চৌধুরী রহমত আলী (১৮৯৫-১৯৫১)।
‘পাকিস্তান’ নামটি তৈরি করেছিলেন।
নেপাল শব্দটি এসেছে সংস্কৃত ‘নিপালয়া’ থেকে, যার অর্থ ‘পাহাড়ের পাদদেশে’।
আবার তিব্বতি ভাষাতে এই শব্দ এর অর্থ হল পবিত্র ভূমি। গঙ্গা অববাহিকা থেকে আসা ‘নেপ’ বা গো-পালকেরা যে উপত্যকাতে এসে বসবাস শুরু করেন, তাই বর্তমান নেপাল। আবার নেপালের উত্তরাঞ্চলের অধিবাসীরা, যারা তিব্বত থেকে এসেছেন, তারা বলেন ভিন্ন কথা। তিব্বতি ভাষাতেই ‘নে’ শব্দের অর্থ হল উল আর ‘পাল’ শব্দের অর্থ বাড়ি। এই অধিবাসীরা ভেড়ার উলের কাপড় বুনতেন। অন্যদিকে কাঠমান্ডুর মানুষদের কাছে আবার নেপাল শব্দের অর্থ হল ‘মধ্যাঞ্চলের দেশ’।
ভুটান শব্দটা এসেছে সংস্কৃত ‘ভোতান্ত’ থেকে, যার মানে করলে দাঁড়ায় ‘তিব্বতের শেষ প্রান্ত’। অথবা যদি এই একই শব্দ উচ্চারিত হয় আলাদা ভাবে, তাহলে এটা হবে ‘ভো-তান’ যেটার অর্থ ‘উচ্চভূমি’। আবার ভুটানিরা কিন্তু নিজেদের ডাকে দ্রুক উল নামে, যার মানে দাঁড়ায় ‘ড্রাগনের দেশ’।
শ্রীলংকা সরাসরি রামায়ণ থেকে টুপ করে পড়ে গিয়েছে। সেই আদি সময় থেকেই এটার নাম ছিল শ্রীলঙ্কা, রাবণের দেশ।
ইন্ডিয়ার উৎপত্তি হল ‘সিন্ধু’ থেকে, যাকে ইংরেজিতে ‘Indus’ বলা হয়। ‘ভারত’ এর উৎপত্তি ঋগ্বেদ থেকে। এটা ছিল একজন রাজার নাম।
মালদ্বীপ এর নামও সংস্কৃত থেকেই উৎপত্তি। সংস্কৃতে ‘মালা’ এবং ‘দ্বীপ’ থেকেই এই দেশ। আক্ষরিক অর্থ করলে দাঁড়ায় ‘দ্বীপের মালা’।
তাহলে বাংলাদেশ নামটা আসলো কীভাবে?
বাংলা শব্দটি এসেছে
#দ্রাবিড়দের বং/বঙ্গা উপজাতি হতে ।
#অস্ট্রিকদের ভঙ্গা/বঙ্গা শব্দ থেকে । যার অর্থ “Sun-God” ।
#বৌদ্ধ_ধর্মগ্রন্থগুলিতে ১৬ টি জনপদের নাম পাওয়া যায় ।যার মধ্য একটির নাম ছিল বঙ্গ।
#আরণ্যক_ব্রাহ্মনে বঙ্গ নামের জনপদের উল্লেখ পাওয়া যায় ।
#মহাভারত থেকে জানা যায়, বালি রাজের স্ত্রী সুদেষ্ণা দীর্ঘতমা ঋষি হতে অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ, সুক্ষ ও পুণ্ড্র নামে পাঁচ পুত্রের জন্ম দেন। এরা সকলেই নিজের নামানুসারে নামীয় প্রদেশের রাজা হন। বঙ্গের নামানুসারে এর শাসিত রাজ্য বঙ্গ নামে অভিহিত হয়।
#মুসলমানদের বিশ্বাস অনুসারে, নবী নূহ আ:-এর ছয় পুত্র ছিলো। তারা পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে উপনিবেশ গড়ে তোলেন। এর মধ্যে একজন ছিলেন হিন্দ্। এই হিন্দের নামানুসারে হিন্দুস্তানের নাম। হিন্দ্-এর চার পুত্র ছিলো । তাদের একজনের নাম ছিলো “বাং”।
বাং-এর সাথে আল (বাঁধ) শব্দ যুক্ত হয়। যা জল প্লাবনের হাত থেকে জনপদ ও শস্যক্ষেত রক্ষা করতো। এই বাং+আল থেকেই পরবর্তীতে বাংলা শব্দটির উৎপত্তি ঘটে। মধ্যযুগে সুলতান সামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ বঙ্গ শব্দের সাথে সংস্কৃত লাহ্ প্রত্যয় যুক্ত করে, বাংলা শব্দটির সুচনা করেন। তিনি বেশ কিছু অঞ্চল কে একত্রিত করে ‘শাহ-ই-বাঙ্গালা’ উপাধি ধারণ করে। ইংরেজ আমলে বাংলা ভাষাভাষি প্রদেশটি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের একটি প্রদেশ ছিলো। যা ইংরেজিতে ‘Bengal’ নামে অভিহিত হত। তখন থেকেই এই প্রদেশটি বাংলা নামে অভিহিত হয়। ১৯০৫ সালের পর থেকেই এ অঞ্চলটি পুর্ব বাংলা সমাধিক পরিচিতি লাভ করে।
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশ কিছু সময়ের জন্য পুর্ব পাকিস্থান নামে পরিচিত হয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর আনুষ্ঠানিকভাবে এ অঞ্চলটি যে নামটি ধারন করে তা আমাদের আজকের প্রিয় ‘বাংলাদেশ’
বাংলাদেশ নামকরণে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা
একাত্তরের চরমপত্রের লেখক এফ আর মুকুলের ভাষ্যমতে, “আলোচনার এক পর্যায়ে এসে মুজিবভাই এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের অবতারণা করলেন। বললেন, আমার মনে অনেক প্রশ্ন। ১৯৪৭ সালে ভারত উপমহাদেশ বিভক্ত হউয়ার সময় পাঞ্জাব এবং বেঙ্গল প্রেসিডেন্সী প্রদেশ দুটিও খণ্ডিত হয়ে গেছে। এর পরেও বিরাট “কিন্ত” রয়েছে। ভারত ও পাকিস্তানের পাঞ্জাবীরা কেউ এই নামটা ছাড়ছে না। কেননা এই নামটার সাথে পাঞ্জাবী ভাষাভাষীদের জাতীয়তাবাদের প্রশ্নটি জড়িয়েছে। এ জন্য আজও পর্যন্ত পাঞ্জাব (পি) এবং পাঞ্জাব (আই) শব্দটি চালু রয়েছে। অথচ বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ রকম ব্যতিক্রম কেন? বিভক্ত বাংলার ভারতীয় অংশকে ‘পশ্চিমবঙ্গ’ এবং ‘পূর্ববঙ্গ’ হিসাবে আখ্যায়িত করে হাজার বছরের ‘বাংলাদেশ’ এই আদি নামটি দু’দলই ছেড়ে দিয়েছে। এখন আবার ষড়যন্ত্রকারীরা আমাদের বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদকে ভুলিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রে প্রস্তাবিত সংবিধানে ‘পূর্ব পাকিস্থান’ নামকরণ করতে চাচ্ছে। কিন্তু আমি তা হতে দেব না।
ভারতীয় বাঙ্গালীরা তাদের এলাকার নামবদলের কোনরকম আন্দোলন শুরু করার আগেই আমাদের জন্মভূমির নাম “বাংলাদেশ” করবই। না হলে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠিত করতে অনেক বিলম্ব হয়ে যাবে।” (চল্লিশ থেকে একাত্তর, এম আর আকতার মুকুল)।
এইভাবেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান “বাংলাদেশ” নামকরণের স্বপ্ন দেখেছিল এবং করাচীতে ১৯৫৫ সালে পাকিস্থান গণপরিষদের ধারা বিবরণীতে বক্তৃতায় স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছিলেন
“ মাননীয় স্পিকার, আপনি দেখতে পাচ্ছেন যে, ওরা (পাকিস্থান সরকার) “পূর্ব বাংলা” নাম বদলিয়ে “পূর্ব পাকিস্থান” করতে চাচ্ছে। অথচ, আমরা বার বার এই দাবীই করেছি যে, এখন এর নাম শুধু “বাংলাদেশ” করা হোক। বাংলাদেশ শব্দের একটি ইতিহাস রয়েছে এবং এর নিজস্ব ঐতিহ্য বিদ্যমান। আপনারা নাম বদলাতে পারেন তবে সেক্ষেত্রে গণভোট নিতে হবে। যদি আপনারা এই নাম বদলাতে চান, তাহলে আমাদের বাংলায় ফিরে গিয়ে জিজ্ঞেস করতে হবে তারা এই ধরনের পরিবর্তন মেনে নিবে কিনা।
‘জুলম মাত করো ভাই’, ‘এইজন্যই আমি সরকারপক্ষের বন্ধুদের কাছে আবেদন করতে চাই, “জুলম মাত করো ভাই”। যদি এইসব কিছু আপনারা আমাদের উপর চাপিয়ে দিতে চান তাহলে আমরা বাধ্য হয়ে সংবিধান বিরোধী পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। সংবিধানের বিধি মোতাবেক আপনাদের কে এগোতে হবে। আপনারা যদি জনসাধারণ কে শাসন তান্ত্রিক পদ্বতি গ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেন, তাহলে তারা অগণতান্ত্রিক পদ্ধতি গ্রহণে বাধ্য হবে। এইটাই বিশ্বের সর্বত্র ঘটে থাকে এবং তা বিশ্বের ইতিহাস থেকে অনুধাবন করা সম্ভব।”
ভাষার নামে দেশের নাম। এতদীর্ঘ বিবর্তন দিয়ে বাংলাদেশের নামকরণ হয়নি।
অতি সংক্ষেপে, একটা দেশের নাম ঠিক হয়ে যায়। হাজার বছরের ইতিহাস মাত্র কয়েক বাক্যে শেষ হয়। একটা দেশের নাম ঠিক হয়ে যায় কয়েক মুহূর্তে, হাজার বছরের প্রক্রিয়া, পরীক্ষা -নিরীক্ষা শেষ হয় এক মুহূর্তে।
💻এস এম শাহনূর
(উইকিপিডিয়ান,কবি ও গবেষক)
Some text
ক্যাটাগরি: বিবিধ
[sharethis-inline-buttons]