![](https://www.old.deshdorshon.com/wp-content/uploads/2018/12/Shomapti-06-750x420.jpg)
সরল পথে চলতে হলে সরল হতে হয়। বুদ্ধিজীবীরা সরল নয়- বুদ্ধিদীপ্ত সরল। অধ্যাপক সরল নয়- জ্ঞানী সরল। জ্ঞানী, বুদ্ধিদীপ্ত কিন্তু সরল দুর্লভ সমন্বয়। আত্মার নীরবতা ছাড়া জ্ঞান, বুদ্ধি ও সরলতার সহাবস্থান অসম্ভব। যীশুকে এক যাজক জিজ্ঞেস করেছিল, তোমার স্বর্গরাজ্যে কে প্রবেশ করবে? যীশু এক শিশুকে উত্তোলন করে বললেন, “যে এই শিশুটির মতো সরল হতে পারবে”। যীশু স্বয়ং ছিলেন সরল। কিন্তু বুদ্ধিদীপ্ত ও জ্ঞানী।
আমাদের ধারণা জ্ঞানীরা অনেক কিছু জানে। আসলে ঠিক উল্টো। জ্ঞানীর তথ্য ভাণ্ডারটি প্রায় শূন্য। তাই দেখতে হাবাগোবা মনে হয়। দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ কুটিলতাও তারা ধরতে পারে না। জ্ঞানী জানে, কী সে জানে না। ‘আমি জানি’ ভাব তার নেই। সর্বদা দাঁড়িয়ে থাকে পরমাপ্রকৃতির সম্মুখে শূন্য পেয়ালায়, যেন তিনি তা পূর্ণ করে দিতে পারেন।
মানবজাতি একই জাতি এবং সমগ্র মানবজাতির লক্ষ্যও ‘এক’। প্রত্যেক অস্তিত্ব এ-পথ ও-পথ ঘুরে এক লক্ষ্যের পানে ছুটে চলেছে। সুতরাং, পথের সামান্য পার্থক্য নিয়ে বিবাদ কেন? পথ তো ভেলার মতো, নদী পাড় হওয়ার জন্য। কেউ যদি ভেলা মাথায় নিয়ে নাচে- নাচুক না! নাচতে নাচতেই তার বোধোদয় হবে- এগোচ্ছে না। রসের জন্য যে ছোবড়া চিপে যাচ্ছে তাকেও যদি সতর্ক করা হয়, সে তুমুল বিতর্ক শুরু করে। দলিল নিয়ে উপস্থিত হয়। সুতরাং নির্বিকার থাকাই উত্তম। চিপতে চিপতে একদিন সে নিজেই বুঝবে, এতে আর রস নেই। যতদিন সে স্বয়ং না বুঝবে, তাকে বুঝানোর সাধ্য কারোর নেই।
যত মত, তত পথ। কার জন্য কোন পথটি সরল তা তাকেই খুঁজে নিতে হবে। অন্যের তৈরি করা পথে হাঁটা সহজ- কিন্তু সরল নয়। চলতে চলতে যে নিজের পথ নিজে তৈরি করে নেয় তার জন্য সে পথটিই সরল পথ। পথ চলতে হয় সামনের দিকে তাকিয়ে। ডানে বামে পেছনে তাকালে পতিত হতে হয় খাদে। এতটুকু নিয়ম মানতে পারলেই সরল পথে যাত্রার প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়।
কিন্তু যাচ্ছি কোথায়? যাচ্ছি তো এখান থেকে এখানে। হিংসা থেকে অহিংসায়। ভয় থেকে প্রেমে। আসক্তি থেকে ভক্তিতে। অজ্ঞান থেকে জ্ঞানে। মৃত্যু থেকে অমরত্বে। সবই তো এখান থেকে এখানে। আমিই যান, আমিই যাত্রী, আমিই সরল পথ, আমিই গন্তব্য।
Some text
ক্যাটাগরি: চিন্তা
[sharethis-inline-buttons]