মঙ্গলবার বিকাল ৩:২৬, ৩রা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ১৬ই এপ্রিল, ২০২৪ ইং

জাকির নায়েকের ইসলাম প্রচারের কৌশল ভুল প্রমাণিত

প্রধান প্রতিবেদক

তার প্রচারকৌশল অন্য ধর্ম ও সম্প্রদায়গুলোর প্রতি আক্রমণাত্মক, সরাসরি অবমাননাকর এবং ধর্মীয় কতগুলো কট্টর গোষ্ঠীর পক্ষে যায়। তারা এগুলো সহজেই কাজে লাগাতে পারে। এই জায়গাগুলোতে ডাঃ জাকির নায়েকের চিন্তাভাবনার যথেষ্ট অভাব ও সংকীর্ণতা বিদ্যমান।

আহমদ দীদাত এবং আরো ক’জন ইসলামি ব্যক্তিত্বের ‘ভিন্নমাত্রিক গতানুগতিক’ পথ ও পদ্ধতি অনুসরণ করে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তোলা ডাঃ জাকির নায়েকের ইসলাম প্রচারের কৌশল ইতিমধ্যেই ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এরই মধ্যে তিনি তার নিজ দেশ ভারতে রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ কিংবা গ্রেফতারের ভয়ে ঢুকতে পারছেন না। এটাকে অবশ্য তার অনুসারিরা এবং কিছু বিভ্রান্ত ও বিপথগামী মুসলিম মোহাম্মদ সা. এর হিজরতের সঙ্গে তুলনা করে বিভ্রান্তি ছড়াতে চেষ্টা করে। মূলত মোহ্ম্মদ সা. ছিলেন ধর্ম প্রচারের দায়িত্বরত দালিলিক ব্যক্তি এবং নবী। তবু তিনি ধর্ম প্রচারে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা অবলম্বন করেন এবং সবরকম কথিত শিক্ষা, ডিগ্রি, অর্থ, চাকচিক্যমুক্ত ও প্রভাবমুক্ত ছিলেন।

অন্যদিকে জাকির নায়েক শুরু থেকেই ইসলাম প্রচারে ন্যূনতম নিরপেক্ষতা অবলম্বনে ব্যর্থ হন এবং মানুষের মধ্যে আক্রমণাত্মক, অবমাননা ও উপহাসমূলক বক্তব্য-বিবৃতিকে প্রাধান্য দেন। অনুষ্ঠান এবং আনুষ্ঠানিকতাও তার অন্যতম প্রাধান্যের বিষয়। এসবে আবার অর্থের স্রোত, সমস্যাগ্রস্ত শিক্ষা-ডিগ্রি-যুক্তি-উদ্ধৃতি ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করেন।

অনেক ইসলামবিশেষজ্ঞ বলছেন, জাকির নায়েকের ইসলাম প্রচার ও ব্যাখ্যা ইসলামের সমসাময়িক প্রশ্নগুলোর সমাধান দূরের কথা, বরং পরস্পরবিরোধী ব্যাখ্যা, বিভ্রান্তি ও সংঘর্ষ আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। পাশাপাশি বৈশ্বিক প্রশ্নগুলোও শুধু এড়িয়েই যাচ্ছে না, আরো জটিল করে তুলছে। তাই তার বক্তব্য ও চিন্তাধারা বিশ্বের প্রায় পঞ্চাশ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছা সত্ত্বেও এবং প্রায় এককোটি মানুষ গ্রহণ করলেও সংশয়বাদ, নাস্তিক্যবাদ, যুদ্ধ-বিভৎসতা, দাঙ্গা-হাঙ্গামা-ফ্যাসাদ থামছে না; আরো বাড়ছে।

ইসলামি বিশ্বাসমতে, সাধারণ নবী বা সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবীর সঙ্গে কারো তুলনার তো প্রশ্ন আসেই না, কিন্তু জাকির নায়েকের নিজ রাষ্ট্রে নিষিদ্ধ হওয়া বা ভয়ে ঢুকতে না পারাটা একজন প্রকৃত সাধারণ মুসলমানের সাথেও তুলনাযোগ্য নয়। কেননা অনেকে মনে করছেন তার প্রচারকৌশল, বক্তব্য-বিবৃতি ও পদক্ষেপগুলো অনেকটা প্রকাশ্যভাবেই ইসলামবিরোধী, পক্ষপাতমূলক এবং আক্রমণাত্মক। এর জন্য তিনি নিজেই দায়ী। তাছাড়া এসবের দ্বারা তার অনুসারিরাও প্রচণ্ড উগ্রতার শিক্ষা পাচ্ছে। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, বর্তমান বিশ্বের অন্য যে কোনো ইসলামি দল, মতবাদ বা গোষ্ঠীগুলোর মতোই জাকির নায়েকের অনুসারিরাও নিজেদের মতবাদে কট্টর। সামান্য সমালোচনাও হজম করতে পারেন না, অন্যদের সঙ্গে বসাবসি ও সমন্বয়ের কোনো মানসিকতা রাখেন না। নিজেদের ভাসা ভাসা চিন্তা-দর্শন ও যুক্তি-বুদ্ধিকেই যথেষ্ট মনে করছেন।

এদিকে অনেক ইসলামবিশেষজ্ঞ বলছেন, জাকির নায়েকের ইসলাম প্রচার ও ব্যাখ্যা ইসলামের সমসাময়িক প্রশ্নগুলোর সমাধান দূরের কথা, বরং পরস্পরবিরোধী ব্যাখ্যা, বিভ্রান্তি ও সংঘর্ষ আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। পাশাপাশি বৈশ্বিক প্রশ্নগুলোও শুধু এড়িয়েই যাচ্ছে না, আরো জটিল করে তুলছে। তাই তার বক্তব্য ও চিন্তাধারা বিশ্বের প্রায় পঞ্চাশ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছা সত্ত্বেও এবং প্রায় এককোটি মানুষ গ্রহণ করলেও সংশয়বাদ, নাস্তিক্যবাদ, যুদ্ধ-বিভৎসতা, দাঙ্গা-হাঙ্গামা-ফ্যাসাদ থামছে না; আরো বাড়ছে। এমনকি কেউ কেউ আজকের বৈশ্বিক উদ্বেগ ও অস্থিরতার পেছনে জাকির নায়েককেও অন্যতম কারণ মনে করেন।

জাকির নায়েক সম্পর্কে একটি কলাম পড়ুন- জাকির নায়েকের বিচ্যুতি ও ভ্রান্তি

অবশ্য এতকিছুর পরও তিনি কিন্তু কোনোরকম ভুল স্বীকারে প্রস্তুত নন, এমনকি যুক্তির খাতিরেও সাময়িক সময়ের জন্য ভুল স্বীকার করে কারো সঙ্গে বসতে প্রস্তুত নন। এমন কোনো পদক্ষেপ বা আহ্বান তার কাছ থেকে আজো আমরা পাইনি, আবার তিনি ঘুরে দাঁড়াতেও পারছেন না। বিশ্লেষকগণ বলছেন, আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবেনও না। কারণ মৌলিক কতগুলো গলৎ দিয়েই তার প্রচারণা ও বক্তব্য শুরু হয়েছিল। এরই চক্রে তিনি আজও ঘুরপাক খাচ্ছেন।

তার বক্তব্য ও প্রচারণার মৌলিক গলদগুলো কোথায় এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তাকে নিয়ে গবেষণা করা একজন বলেন, সেগুলো সংক্ষেপে ব্যক্ত করা ও পাঠকদের বোঝানো কঠিন। কারণ এরা সবাই ধর্মকে প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গি ও ধ্যান-ধারণা দিয়েই বিচার করতে অভ্যস্ত। তবুও সংক্ষেপে বলা যায়, আজকের বিশ্বে যেহেতু মানবসমাজের এক বৃহৎ অংশ ইসলামবিরোধী এবং একে জঙ্গিবাদ হিসাবে কল্পনা করে আসছে, তাই ‘ইসলাম’ শব্দটি শোনামাত্রই তাদের মনে ঘৃণা ও সাম্প্রদায়িক মনোভাব জেগে ওঠে। আর তা প্রশমনে বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থের উদ্ধৃতি কোনোভাবেই কার্যকর নয়।

দ্বিতীয়ত, আর দশটি ধর্ম ও মতবাদের মতো এটি বড় বড় অনুষ্ঠানে যুক্তিতর্কের মাধ্যমে অন্যকে হারানো, তালি বাজানো বা মিথ্যা প্রমাণ করার বিষয় নয়। তৃতীয়ত, তার প্রচারকৌশল অন্য ধর্ম ও সম্প্রদায়গুলোর প্রতি আক্রমণাত্মক, সরাসরি অবমাননাকর এবং ধর্মীয় কতগুলো কট্টর গোষ্ঠীর পক্ষে যায়। তারা এগুলো সহজেই কাজে লাগাতে পারে। এই জায়গাগুলোতে ডাঃ জাকির নায়েকের চিন্তাভাবনার যথেষ্ট অভাব ও সংকীর্ণতা বিদ্যমান। এটা কাটিয়ে উঠতে তাকে যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হবে। আর কাটিয়ে উঠতে না পারলে অন্য শত শত ইসলামপন্থী মতবাদ কিংবা দল-গোষ্ঠীর মতোই তিনি এবং তার অনুসারিরাও খুব দ্রুতই হারিয়ে যাবেন। এটাই বর্তমান বিশ্ববাস্তবতা।

ক্যাটাগরি: অপরাধ-দুর্নীতি,  ইসলাম,  প্রধান খবর

ট্যাগ:

[sharethis-inline-buttons]

Comments are closed.