শনিবার সকাল ১১:৪৩, ২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ৫ই অক্টোবর, ২০২৪ ইং

একজন তুরিন আফরোজ

৫৮০ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

একজন তুরিন আফরোজ। তিনি শুধু দেশেই নয়, দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতেও বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন । শিক্ষা জীবনে অসামান্য মেধার পরিচয় তিনি রেখেছেন দেশে এবং বিদেশে। কর্ম জীবনেও একজন সফল ব্যাক্তি তিনি। মানুষকে আপন করে নিতে পারেন এক নিমেষেই।

মানবাধিকার আন্দোলনে রাজপথ থেকে পুরো বিশ্বে তিনি এক বিস্ময়ের নাম। তুরিনকে মানুষ চেনে এক লড়াকু সৈনিক হিসেবে। অন্যায়ের সাথে আপোষ করতে পারেন না বলে মানুষ যেমন তাঁকে ভালবাসে, তেমনি তুরিনকে মোকাবিলা করতে হয়েছে নানা ষড়যন্ত্র।

ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বৃহত্তর রংপুরের প্রথম মহিলা ব্যারিস্টার। তিনি আমাদের খুব কাছের একজন মানুষ, বলতে গেলে, আমাদের ঘরেরই মানুষ। তুরিন শিক্ষা জীবন শুরু করেন ঢাকা শহরের হলিক্রস স্কুল এবং কলেজে। ১৯৮৮ সালের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় তিনি ঢাকা বোর্ডের সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। এরপর তিনি ভারতের দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয় হতে অর্থনীতি বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স এবং পরর্বতীতে যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়া হতে আইন বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স করেন।

তুরিন আফরোজ আইন ও অর্থনীতি বিষয়ে দুটি পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেছেন। একটি অস্ট্রেলিয়া হতে এবং অন্যটি যুক্তরাষ্ট্র হতে। দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালে তুরিন আফরোজ ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের “অলরাউন্ডার” শিক্ষার্থী হিসেবে ১৯৯২ সালে জিতে নেন সম্মানিত ‘কমলা নেহেরু পদক’। আজ পর্যন্ত ভারতে কোন বিদেশী শিক্ষার্থী এই পদক জিতে নিতে পারেননি।

আইন ও অর্থনীতি বিষয়ে অসাধারণ গবেষণা করার জন্য ২০০২ সালে অস্ট্রেলিয়ার ল’ এন্ড ইকোনোমিক এ্যাসোসিয়েশন তুরিনকে David J. Teece – AustLEA Scholar in Law and Economics হিসেবে ঘোষণা করেছে। তুরিন আফরোজই একমাত্র বাংলাদেশী যিনি আজ পর্যন্ত এই পদক অর্জন করেছেন।

২০১৯ সালে তুরিন আফরোজকে ওয়ার্ল্ড এডুকেশন কংগ্রেস বিশ্বের শীর্ষ ৫০ নারী শিক্ষাবিদের সম্মাননায় ভূষিত করেছে। তুরিন আন্দোলন করেন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। মৌলবাদ ও জঙ্গীবাদের বিরূদ্ধে দাঁড়িয়ে উচ্চকণ্ঠে লড়াই করতে একটুও পিছপা হন না তিনি। অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ তুরিন ছুটে গিয়েছেন দেশের যে প্রান্তেই সাম্প্রদায়িক আক্রমণ হয়েছে। তাই তাঁকে দেখা যায় কক্সবাজারের রামুতে, নোয়াখালির বেগমগঞ্জে, ব্রাম্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে, যশোরের অভয়নগরে কিংবা দিনাজপুরের কর্ণাই গ্রামে।

তিনি রাজপথের লড়াকু সৈনিক। মৌলবাদী শক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলন করার কারণে তাঁর ওপর জীবনঘাতী আক্রমণও কম হয়নি। কিন্তু কোন কিছুই দমাতে পারেনি তুরিন আফরোজকে।

অসম সাহসিকতার জন্য দেশের ভেতরেও তুরিনকে ভূষিত করা হয়েছে নানা সম্মাননায়। তিনি ২০১৩ সালে আইন ও রাজনীতি বিষয়ে “TOYP Award”, ২০১৪ সালে শান্তি ও মানবাধিকার বিষয়ে “অনন্যা নারী পদক”, ২০১৫ সালে শান্তিতে “ধরিত্রী পদক”, ২০১৬ সালে আইন ও মানবাধিকার বিষয়ে “সূর্যবার্তা মিডিয়া পদক” এবং ২০১৮ সালে আইন ও বিচার বিষয়ে “বিবার্তা স্বর্ণ পদক” প্রাপ্ত হন।

তুরিন আফরোজ প্রায় বিশ বছরের অধিক সময় ধরে দেশ ও বিদেশের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে আধ্যাপনা করছেন। তুরিনের গবেষনা দেশী এবং বিদেশী বিভিন্ন একাডেমিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর গবেষণা ভিত্তিক লিখিত পুস্তকের সংখ্যাও কম না।

একাত্তরের গণহত্যা এবং ধর্ষন বিষয়ে লিখিত তুরিনের পুস্তক সমূহ আন্তর্জাতিকভাবে বিদেশী প্রকাশনা সংস্থা হতে প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে তুরিন আফরোজ বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের রাজপথের আন্দোলন থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিদেশী পার্লামেন্ট ও ফোরামে সোচ্চার দাবি জানিয়ে এসেছেন। বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ বিচারের দাবীর পক্ষে তিনি ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে, যুক্তরাজ্যের হাউজ অব লর্ডসে এবং হাউজ অব কমনসে, বেলজিয়ামের পার্লামেন্টে, ফ্রান্সের পার্লামেন্টে এবং সুইডেনের পার্লামেন্টে সফলভাবে শুনানী করেছেন।

তুরিন আফরোজ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী এক নির্ভীক সৈনিক। নতুন প্রজন্মের জাগরণ মঞ্চের একজন আপোষহীন যোদ্ধা। আর তাই ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসী না হওয়ায় দেশ যখন বিক্ষোভে উত্তাল, ঠিক তখনই বাংলাদেশ সরকার তুরিন আফরোজকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দান করেন। তিনি ২০১৩ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের সকল মামলায় তুরিন আফরোজ আইনি যুক্তি-তর্ক তুলে ধরেছেন। প্রতিটি যুদ্ধাপরাধ মামলার রায়ের পর মিডিয়াতে আর টকশোতে তুরিন আফরোজের জোড়ালো বক্তব্য বাংলাদেশের কোটি মানুষের মনে তাঁকে স্থান করে দিয়েছে।

তুরিন আমাদের দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের সেনাপতি। তুরিন আমাদের অহংকার। তুরিন আমাদের গর্ব। তুরিনের বড় আব্বা জনাব মোঃ আমিন ছিলেন ১৯৭০ এর আওয়ামী লীগের নির্বাচিত জন প্রতিনিধি এবং গণ পরিষদের সদস্য। জনাব মোঃ আমিন বাংলাদেশের বাহাত্তরের সংবিধান প্রণেতাদের মধ্য অন্যতম একজন। তুরিন আফরোজের দাদা জনাব মোঃ শাহাদাত হোসেন (শাদো মিয়া) ১৯৭১ সালে জনাব মোঃ আমিন এর নেতৃত্বে জলঢাকা এলাকার বিশিষ্ট মুক্তিযুদ্ধ সংগঠক ছিলেন। তুরিনের বাবা মরহুম তসলিম উদ্দিন আহমেদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালীন সময়ে ছাত্র লীগের রাজনীতি করতেন এবং সেই সময়ে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আব্দুল লতিফ হল-এর ছাত্র লীগের সংগঠক ছিলেন। তুরিন জলঢাকার মাটি আর মানুষের বাতিঘর। নিজের জলঢাকাতে গড়ে তুলেছেন “ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ফাউন্ডেশন”। নিরলস ভাবে কাজ করে চলেছেন সাধারণ মানুষের জন্য। জলঢাকার গরীব মানুষদের আইনী সহায়তা, দরিদ্র নারীদের বিনামূল্যে দর্জি প্রশিক্ষন, দরিদ্র পরিবার সমুহকে ব্যাক্তিগত প্রচেষ্টায় আর্থিক সহায়তা ও চিকিৎসা সুবিধা প্রদান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য নানাবিধ সামাজিক কর্মকান্ড এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীদের জন্য নানাবিধ আন্দোলন করে চলেছেন। তুরিন আফরোজের স্বামী একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যাবসায়ী।তুরিন আফরোজ এক কন্যা সন্তানের জননী। তুরিন আফরোজ মনে করেন শুধু স্বামী আর সন্তান নন,প্রকৃত পক্ষে পুরো জলঢাকায় তার পরিবার। আর এই পরিবারকে নিয়ে রয়েছে তার অসংখ্য স্বপ্ন।

তাই তুরিন নিজেকে ব্যাস্ত রাখেন নয়া জলঢাকা আন্দোলনের নানা কর্মকান্ড নিয়ে। এগিয়ে যাক তুরিন আফরোজ তার স্বপ্নের সিড়ি বেয়ে। আসুক নতুন প্রভাত তুরিনের হাত ধরে।

Some text

ক্যাটাগরি: মতামত

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply

আমি প্রবাসী অ্যাপস দিয়ে ভ্যাকসিন…

লঞ্চে যৌন হয়রানি