শনিবার ভোর ৫:১৪, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং

নাজাত কী (রমজানের শেষ দশক) এবং লাভের উপায়?

৫৭৭ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

মাহে রমজানের রহমত ও মাগফিরাতের দশক শেষে শুরু হলো নাজাতের দশক। তবে আল্লাহতায়ালার রহমত ও মাগফিরাতের দরজা বান্দার জন্য সব সময়ই খোলা থাকে।
নাজাত’ অর্থ ধ্বংস থেকে মুক্তি পাওয়া, আযাব থেকে রক্ষা পাওয়া।
নাজাত দুনিয়াতেও প্রয়োজন, আখেরাতেও প্রয়োজন। দুনিয়াতে নাজাত হচ্ছে, শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত শয়তানের আক্রমণ থেকে মুক্ত থাকা, সব ধরনের গোমরাহী থেকে মুক্ত থাকা, পার্থিব ক্ষতিসমূহ থেকে মুক্ত থাকা। আর আখিরাতের নাজাত হচ্ছে আল্লাহ তাআলার আযাব ও গযব থেকে, জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া।

জামে তিরমিযী-এর হাদীস নম্বর ২৪০৬। সাহাবী হযরত উকবা ইবনে আমির রা. বলেন-

“قلت: ما النجاة يا رسول الله!”
‘‘আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আরজ করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! নাজাতের উপায় কী?’’
এ হাদীসে হযরত উকবা ইবনে আমির রা.-এর জিজ্ঞাসার জবাবে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনটি কথা বলেছেন,
✪ প্রথম কথা-

أملك عليك لسانك
“তোমার যবানকে তোমার নিয়ন্ত্রণে রাখ।”
➤ কুরআন মজীদের ইরশাদ-

ما يلفظ من قول إلا لديه رقيب عتيد
‘মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে তার জন্য তৎপর প্রহরী তার নিকটেই রয়েছে।’ (সূরা ক্বফ ৫০ : ১৮)
হাদীস শরীফে আছে, সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা কি আমাদের মুখের কথার কারণে ধৃত হব? আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-

وهل يكب الناس على مناخرهم إلا حصائد ألسنتهم
অর্থাৎ অধিকাংশ মানুষ তো তাদের ‘মুখের ফসলে’র কারণেই জাহান্নামে যাবে। (জামে তিরমিযী, হাদীস : ২৬১৬)
আরো ইরশাদ হয়েছে, জাহান্নামে নারীর সংখ্যা হবে বেশি। জিজ্ঞাসা করা হল, কেন? বললেন, এরা গঞ্জনা-অভিশাপ বেশি দেয় এবং স্বামীর না-শোকরি করে।
✪ দ্বিতীয় কথা-

وليسعك بيتك
‘‘তোমার ঘর যেন তোমার জন্য প্রশস্ত হয়।’’
অর্থাৎ ঘরে অবস্থান করবে। বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হবে না। ঘরে আছ তো নিরাপদ। জান-মাল নিরাপদ। ইজ্জত-আব্রু নিরাপদ। ফিৎনা থেকে নিরাপদ। ঘর থেকে বের হলেই গুনাহ হতে পারে।
➤কিয়ামতের দিন প্রত্যেককে পাঁচটি প্রশ্ন করা হবে, যার একটি হচ্ছে-

عن عمره فيما أفناه
✔জীবন কোথায় ব্যয় করেছে।

وعن شبابه فيما أبلاه
✔যৌবন কোথায় খরচ করেছে।
(জামে তিরমিযী, হাদীস : ২৪১৬)
তো জীবন-যৌবনের এক এক মুহূর্তের হিসাব দিতে হবে এবং জবাব দেওয়ার আগ পর্যন্ত এক পা-ও নড়তে পারবে না। তাই ঘরে থাকবে, বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হবে না।
✪ তৃতীয় কথা হচ্ছে-

وابك على خطيئتك
‘‘এবং নিজের গুনাহর উপর কাঁদতে থাক।’’
হাদীসে আছে, সাত শ্রেণীর মানুষ কিয়ামতের দিন আরশের ছায়ায় স্থান পাবে। তাদের মধ্যে এক শ্রেণী হচ্ছে-

رجل ذكر الله خاليا ففاضت عيناه
ঐ ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করেছে আর তার চোখ থেকে অশ্রু প্রবাহিত হয়েছে। (জামে তিরমিযী, হাদীস : ২৩৯১)
নিজ গুনাহর কথা স্মরণ করে, আল্লাহর বড়ত্ব ও মহত্বের কথা স্মরণ করে বান্দার চোখ থেকে যে অশ্রু ঝরে তা আল্লাহ তাআলার কাছে অনেক অনেক প্রিয়। আর এটা নাজাতের রাস্তা। এ বান্দা দুনিয়াতেও হেফাযতে থাকবে, আখিরাতেও নাজাত।
➤রমজানের শেষ দশকে আমাদের জন্য নাজাত লাভের এছাড়াও দুটো বড় ধরনের আমল বা সুযোগ রয়েছে।
এক. ২০ রমজান সূর্যাস্তের পর থেকে শুরু হয়ে গেছে ইতিকাফ।
দুই. রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর বা শবেকদর।
‘যে ব্যক্তি ছওয়াবের বিশ্বাস নিয়ে ইখলাসের সঙ্গে লাইলাতুল কদরে ইবাদত করবে তার পেছনের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে’। [বুখারি ও মুসলিম শরিফ]
রমজানের  আখেরি দশকে যতগুলো বেজোড় রাত আছে সে রাত গুলোতে লাইলাতুল কদর তালাশের কথা বলা হয়েছে। একবার হজরত আয়শা সিদ্দীকা (রা.) রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ইয়া রসূলুল্লাহ! আমি যদি লাইলাতুল কদর পাই তাহলে কী দোয়া করব এবং আল্লাহর কাছে কী চাইব? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বলেছিলেন! তুমি দোয়া করবে —
‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আ’ন্নি’। অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি বড়ই ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাস, তাই আমাকে ক্ষমা করে দাও। (ইবনে মাজাহ, ও তিরমিজি)
তাই আসুন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের জবানে শেখানো দোয়া আমরাও বেশি বেশি বলি, ‘হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাস, আমাকে ক্ষমা করে দাও’। আরও বলি হে আল্লাহ! আমাদেরকে নাজাত দান করন।আমিন।

Some text

ক্যাটাগরি: ধর্ম

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply

আমি প্রবাসী অ্যাপস দিয়ে ভ্যাকসিন…

লঞ্চে যৌন হয়রানি