শুক্রবার রাত ২:০৭, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং

আমার বাবা-মা ও আমি (পর্ব-৯)

৮৭৩ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

মানুষকে তার চলার পথে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোতে জীবনের গতিবিধি পরিবর্তনের জন্য তাকে কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কিছু সিদ্ধান্ত সঠিক হয় কিছু সিদ্ধান্ত ভুল হয়। তাই বলে সিদ্ধান্তহীন জীবনযাপন করা কোনো মানুষের পক্ষে অসম্ভ। জীবনের প্রয়োজনেই আমদের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তেমনি আমার আন্টিও তার জীবনে কিছু সিদ্ধান্ত নেয়। যা তার বর্তমানে জীবনের পথকে সুগম করে তোলে। তার সে সিদ্ধান্তগুলোর আলোকে আজকের তিনি গড়ে উঠেছেন। যা জীবনের কঠিন বাস্তবতাগুলোকে মেনে নিতে শিখিয়েছে।

একদিকে আব্বার বিদেশ যাওয়া হয়নি। তাই তিনি নতুন একটি চাকুরি জোগাড় করে, চাকুরি করতে শুরু করলেন। তখন আম্মাকে বড় বোন হিসেবে ছোট বোনের বিয়ে নিয়ে ভাবতে হয়। নিজের জীবনের জন্যতো আরেকজনের জীবনকে তিনি বিপন্ন করে তুলতে পারেন না। জীবনের প্রয়োজনে সময়ের টানে তাকে আন্টির বিয়ে দেবার সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তাই পারিবারিকভাবে তার বিয়ে দেখা শুরু হয়। তার মনেও তখন বিয়ের রঙ্গিন স্বপ্ন বাসা বেঁধেছিল। হবেই তো কারণ বয়সটাযে তখন তার ২৩ কিংবা ২৪ বছর।

প্রথমে কয়েকটা বিয়ে ফেরত যায়। সর্বশেষ যে বিয়েটা আসে সেটা ছিল আপাত দৃষ্টিতে ভালই ছিল। তাই সবাই এই বিয়ের ব্যাপারে খুব আগ্রহ দেখাতে শুরু করে। পারিবারিকভাবে খুঁজ-খবর নেওয়া শুরু হয়। নানা বাঁধা বিপত্তি আসে বিয়েতে। তবুও আমার আন্টি কিছুটা শিক্ষিত হওয়ায় মনে করতেন তার সিদ্ধান্তই সঠিক সিদ্ধান্ত। তার কাছে মনে হয়েছিল ছেলে ভালো ব্যবসা আছে। তাহলে বাঁধা কিসে? তাই তিনি নিজে সিদ্ধান্ত নিয়ে বিয়ে করে ফেললেন। যা আমার পরিবার মেনে নিতে পারেনি। তবুও যা হবার তাতো হয়ে গেছে। পরে সম্মত হতে হয় আম্মাদের পরিবারের সবাইকে।

ভালই চলছিল তাদের সম্পর্ক। আম্মা আন্টির কথায় আন্টির স্বামী শাহীন সাহেবকে ৫০,০০০ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তাছাড়ও আম্মার চার-পাঁচ ভরি স্বর্ণ আন্টিকে দিয়ে দেবার সিদ্ধান্ত নেন। আম্মা সবসময় নিজের দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে খুবই অগ্রসর ছিলেন। নিজের দায়িত্ব মনে করে তার সবকিছু বোন আর বোন জামাইয়ের জন্য উজাড় করে দেয়।

কিছু দিন পর আন্টি আর শাহীন সাহেবের সঙ্গে সম্পর্কটা টানাপোঁড়নে পড়ে যায়। তার রয়েছে অসংখ্য কারণ। তখন তিনি নিজেই তার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। তখন আন্টি বিভিন্ন লোকের মা্ধ্যমে শাহীন সাহেবের বিভিন্ন তথ্য উদঘাটনের চেষ্টা করে। পরে জানা যায় তিনি বিবাহিত ও দুই সন্তানের জনক। গাড়ি আর ব্যবসা যা ছিল তার কিছুই তার নিজের ছিল না। তখন আন্টি সিদ্ধান্ত নেন তাকে তালাক দেবে। তালাক দিলেই আর ভুলের মাশুল দেওয়া হয়ে যায় না। সে যে টাকা আর স্বর্ণ নিয়েছিল তার ফেরত আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু সিদ্ধান্ত নিলেই কী আর সবকিছু সহজে ফিরে আসে আমাদের কাছে?

যাইহোক আল্লাহর শুকরিয়া অল্প করে তার কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয় ঠিকই। যে টাকা আমাদের পরিবারের কোনো কাজে আসেনি। তবে উপকার হয়েছে আন্টি তার জীবনে বিশাল একটা শিক্ষা পেয়েছে। যার মাশুল তাকে আজও গুণতে হচ্ছে। চোখের পানি ফেলতে হয় নিভৃতে। কউকে কিছু বলতে পারে না। নিজের মধ্যে সবকিছু রেখে জীবনের কঠিন বাস্তবতাকে মেনে নিতে হয় তাকে।

এক বছরের মাথায় দুই-দুইটা ধাক্কা যা আম্মাকে আরও বেশি মানসিক চাপে ফেলে। আস্তে আস্তে তিনি অসুস্থ হতে শুরু করেন। তবুও কিছুটা স্বাভাবিক ছিল তখন। কিন্তু পরবর্তি জীবনে তিনি সেগুলো ভেবে কষ্ট পেয়ে অনেকটা পাগলের মত হয়ে পড়েন। অপরদিকে আন্টি তার জীবনকে নতুনভাবে গড়ে তোলায় সচেষ্ট হয়ে পড়েন। এটাই শেষ নয় আরোও ঝড়ের কথা আছে পড়ে কোনো একসময় বলব। এতসব কিছুর পরও কেউ পৃথক হবার কথা ভাবেনি। সবাই এক সঙ্গে নতুন করে জীবনকে সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

Some text

ক্যাটাগরি: আত্মজীবনী

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply

আমি প্রবাসী অ্যাপস দিয়ে ভ্যাকসিন…

লঞ্চে যৌন হয়রানি