বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭:২৭, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং

আমার বাবা-মা ও আমি (পর্ব-৮)

৭৩০ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

জীবনতো আর থেমে থাকার নয়। সে তার গতিতে ছুটে চলে। তেমনি এত সুখ-শান্তি থাকার পরও আমার পরিবার আরও তার চেয়ে বেশি ভাল থাকার যায় তার সন্ধান করতে থাকে। আব্বা যা উপার্জন করে নিজের পরিবার নিয়ে একা থাকলে তাতে কিছুই হতো না। তবু সবাই মিলেমিশে একসাথে থাকার কারণে তিনি তা বুঝতে পারতেন না। তাতে কী? তবুও যে নিজের প্রয়োজনে নিজের চাওয়ার কারণে এমন করে চলা যায় না। আম্মা চায়ছিলেন তার ভালো একটা উপার্জনের ব্যবস্থা করার জন্য। আব্বারও সায় ছিল এ ব্যাপারে।

দেশে থেকে ভালো উপার্জন করা সম্ভব নয়। এমন একটা ধারণা ছিল গ্রামে থাকা বেশিরভাগ মানুষের। আমার পরিবার দীর্ঘ একটা সময় গ্রামে ছিল। তাদের পাশের বহু মানুষ বিদেশে গিয়ে নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করেছে। তাই সিদ্ধান্ত নিয়ে আব্বাকে প্রথমবার বিদেশ পাঠানো হয়। তেমন একটা সুবিধা করতে পারেননি তিনি। তাতে কী হয়েছে? প্রথমবার পারেনি দ্বিতীয়বার পুরাতন অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি দ্বিতীয়বার সফল হতে পারবেন এমন বিশ্বাস ছিল সবার। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। তাকে আবার বিদেশ পাঠানো হবে। আম্মার হাতে কিছু টাকা ছিল বাকি টাকা কারো কাছ থেকে ধার করে ব্যবস্থা করা হবে।

সেজন্য মমতা আন্টির জামাইকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। আবার পাসপোর্ট করা হয়। মমতা আন্টির জামাই জামান আঙ্কেল এই বিষয়ে দক্ষ ছিলেন। তার ঘন ঘন আসা যাওয়া ছিল তখন আমাদের বাসায়। যদিও তিনি গ্রামেই থাকতেন। যাই হোক উনার এক আত্মীয়র মাধ্যমে প্রচেষ্টা চলতে থাকে। আম্মা তাকে সেজন্য ৭০ হাজার টাকা ক্যাশ তার হাতে দেন।

দিনের পর দিন গড়িয়ে চলছে। আব্বার বিদেশের বিষয়ে দৌঁড়াতে গিয়ে যে চাকরি করতেন সম্ভবত তা ছেড়ে দিয়েছিলেন। তাই তার নিজের প্রয়োজনের সবকিছু আম্মার কাছ থেকে নিতে হতো। এভাবে কী আর চলা যায়। কবে না কবে বিদেশের ভিসা প্রসেসিং হয় আর তিনি বিদেশ যাবেন। সুযোগ পেলে কেউ কী আর তা ছেড়ে দেয়? তাই আব্বাও একেবারে ঘরে বসা ছিল।

মাসের পর মাস গড়িয়ে যায় জামান আঙ্কেল বলেন আজ না কাল। এভাবে প্রায় বছরখানেক পার হয়ে গেল। তার বিদেশের কোনো খোঁজ-খবর হয় না। হঠাৎ একদিন খবর পাওয়া গেল আব্বার ভিসা পাওয়া যাচ্ছে না। তাই তার আর বিদেশ যাওয়া হবে না। এই ধাক্কা সামলানো আমাদের পরিবারের জন্য অনেক কষ্টকর ছিল তখন। আব্বার বিদেশ যাওয়া হল না। ৭০ হাজার টাকার কোনো পাত্তা পাওয়া গেল না। পরে এ বিষয়ে জামান আঙ্কেলের সাথে দীর্ঘদিন আমাদের সম্পর্ক ভাল ছিল না। তারপরও ৩,০০০-৪,০০০ টাকা করে অনেকদিন সময় নিয়ে টাকাটা পরিশোধ করেন। আম্মা বিশাল এক ধাক্কা খায়, তখন থেকে তার মানসিক সমস্যা তৈরি হয়। তবুও জীবনের প্রয়োজনে মেনে নিতে হয় সকলকিছুকে। আমার পরিবারও মেনে নেয়। এতো ধাক্কা খাওয়ার পরও কারো মনমানসিকতা তেমন একটা ভেঙ্গে যায়নি।

তাদের এসব দেখে আমিও কখন যে নিজেই তাদের মতো ধৈর্য্যশীল হয়ে পড়েছি নিজেও জানিনা। তখন থেকেই আমি সকলকিছু খুব সহজে কী করতে মানতে হয়? তা শিখে গেছি। আর জীবনকে তার স্বাভাবিকগতিতে চলতে দেওয়ার একটা অভ্যাস তৈরি করে ফেলি। তাই তাদের দোষ না দেখে নিজের দোষটাকে অনুসন্ধান করে বেড়াই। এসবকিছু না বললেও পারতাম তবুও বলছি নিজের কাছ থেকে যেন এগুলো হারিয়ে না যায়।    

চলবে…

শরীফ উদ্দীন রনি : শিক্ষক, সাংবাদিক

Some text

ক্যাটাগরি: আত্মজীবনী

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply

আমি প্রবাসী অ্যাপস দিয়ে ভ্যাকসিন…

লঞ্চে যৌন হয়রানি